চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলায় রূপান্তরিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা প্রশাসন ৭৮-আসন বিশিষ্ট ১০টি ডাবল ডেকার স্কুল বাসকে স্মার্ট বাসে রূপান্তরিত করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই বাসগুলো শহরের পাঁচটি রুটে চলাচল করছে। বাসগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত করার জন্য একটি অ্যাপ বানানোর কাজও চলছে।
শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন স্কুলযাত্রার এক ভিন্নরকম চিত্র কল্পনা করা যাক। বাসে ওঠার পর শিক্ষার্থীর স্মার্ট কার্ডের সংকেতে চলা শুরু করলো বাসের চাকা; সাথেসাথে অভিভাবকদের ডিভাইসে পৌঁছে গেল একটি বার্তা; যাতে লেখা আছে বাস ছাড়ার জায়গা ও সময়।
শুধু তা-ই নয়। শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নামলে অভিভাবকদের ডিভাইসে আরো একটি বার্তা পৌঁছায়, যাতে লেখা থাকে বাস থেকে নামার সময় ও অবস্থান। অর্থাৎ যাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে নিশ্চিত হয় যথাযথ নিরাপত্তা।
এছাড়া অভিভাবকরা বাসে ইনস্টল করা আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। একইসাথে জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে বাসের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারেন।
পকেটে বা ব্যাকপ্যাকে খুচরা টাকার খোঁজার ঝক্কির দিন শেষ। নিজেদের কাছে থাকা স্মার্ট কার্ডের ছোঁয়াতেই এখন থেকে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। বিকাশ বা নগদের মতো পরিচিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রিচার্জযোগ্য এই স্মার্ট কার্ডগুলো।
যদিও উন্নত স্কুল বাসের এই চিত্র মূলত উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়। তবে শীঘ্রই আমাদের নিজস্ব বন্দর শহর চট্টগ্রামের রাস্তায় দেখা মিলবে এ ধরনের উন্নতমানের বাসের।
চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলায় রূপান্তরিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে জেলা প্রশাসন ৭৮-আসন বিশিষ্ট ১০টি ডাবল ডেকার স্কুল বাসকে স্মার্ট বাসে রূপান্তরিত করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই বাসগুলো শহরের পাঁচটি রুটে চলাচল করছে। বাসগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত করার জন্য একটি অ্যাপ বানানোর কাজও চলছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইটি এবং শিক্ষা) আব্দুল মালেক বলেন, “আমরা স্কুল বাসগুলোকে স্মার্ট স্কুল বাসে রূপান্তরিত করার জন্য দেশব্যাপী প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই)-এর কাছে একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। প্রতিযোগিতায় জিতলে স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
একটি বাসকে স্মার্ট বাসে রূপান্তর করতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অ্যাপস তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এখন চলছে বলেও জানান তিনি। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে এবং পরিষেবাটি চালু করতে এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে।
“বর্তমানে আমরা বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে নিউমার্কেট হয়ে চকবাজার-গনি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদিঘি কোতোয়ালি এবং অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২ নম্বর গেট-জিইসি-টাইগার পাস পর্যন্ত পাঁচটি রুটে ১০টি ডাবল-ডেকার বাস চালাচ্ছি। তা সত্ত্বেও নগরীর হালিশহর, বড়পোল, ইপিজেড, মোহরা এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলে স্কুল বাস নেই। আমরা বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছি। সেইসাথে রুটগুলোকেও সম্প্রসারণ করতে চাই,” বলেন তিনি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাবলিক বাসে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের একা স্কুলে পাঠান না।
তিনি বলেন, “অভিভাবকরা তাদের ব্যস্ত রুটিনের মধ্য থেকে সময় বের করে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার ও নিয়ে আসার কাজটা করে। এই কারণে অনেক কর্মজীবী মা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্মার্ট বাস চালু হলে অভিভাবকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তারা আইপি ক্যামেরা এবং জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে তাদের বাচ্চাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।”
“চট্টগ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্পের মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রাখি আমরা,” বলেন তিনি। প্রকল্পটিকে একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
আবুল বাশার আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআরটিসি) আরও ১০টি বাস বরাদ্দ করার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে রুট সম্প্রসারণ করা যায়।
তিনি আশা করছেন, প্রকল্পটি চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন করবে, একইসাথে অভিভাবকদের সময় বাঁচবে।
স্কুল বাস মনিটরিং টিমের প্রধান সমন্বয়কারী মিনহাজ চৌধুরী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট বাস পরিষেবা পেতে নিবন্ধন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো নিবন্ধন ফি লাগবে না। আমরা নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি ফর্ম বিতরণ করেছি।”
শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশে প্রথমবারের মতো স্মার্ট বাস পরিষেবার অংশ হিসেবে স্মার্ট কার্ড পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তারা।”
এর আগে, সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দ ১০টি ডাবল ডেকার বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস চালু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এই বাসগুলো গত তিন বছর ধরে পাঁচটি রুটে ২ থেকে ৩ হাজার শিক্ষার্থী বহন করে চলেছে।
“আমরা আশা করছি, অতিরিক্ত ১০টি স্মার্ট বাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ হবে,” বলেন মিনহাজ।
এদিকে, সাবেক ছাত্রনেতা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “ছাত্ররা প্রায়ই স্কুলে যাওয়া-আসার পথে পরিবহন সংকটের মুখে পড়ে। আমরা শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের দাবি জানিয়েছি। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে ১০টি ডাবল ডেকার বাস প্রদান করেন। আমরা তার দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য তার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।”
“স্মার্ট স্কুল বাস প্রকল্পটি বন্দর শহরের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে চিহ্নিত হবে,” বলেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.