সিলেটঃ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জনকে বঞ্চিত করে চতুর্থ জনকে নিয়োগ দেয়ার ঘটনায় সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সিলেটের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ঘটেছে এমন ঘটনা। যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করার ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্য প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
লিডিং ইউনিভার্সিটি সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৬ মার্চ ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগে একজন লেকচারার নিয়োগ দেওয়ার রিকুইজিশন দেন একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রার্থীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করা হয়। সিভি যাচাই বাছাই শেষে প্রাথমিকভাবে চারজনের শর্ট লিস্ট তৈরি করা হয়।
৩০ মার্চ লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ৪ জন প্রার্থীর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি উপস্থাপনা (ডেমোক্লাস) এবং প্রজেক্ট মিলিয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের লেকচারার পদে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ৬ সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্যরা পরীক্ষা শেষে নিজ নিজ স্বাক্ষরপূর্বক প্রার্থীদের নম্বর ও মেধা তালিকা জমা দেন লিডিং ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের নিকট। এতে উপযুক্ত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেন তাঁরা।
উক্ত নিয়োগ ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. বশির আহমেদ ভূঁইয়া, আইকিউএসি’র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহানশাহ মোল্লা, বিভাগীয় প্রধান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ট্যুরিজম ও হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান, বোর্ড অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সমন্বয়কারী সহকারী অধ্যাপক ওয়াহিদা আক্তার এবং বোর্ড অব আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সমন্বয়কারী সহকারী অধ্যাপক মোঃ শামিমুল ইসলাম।
পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নিয়োগের শুপারিশ করা হয়। তাতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৮ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তানভির আহমেদ মিন মফিদ, ৭৫ নম্বর পেয়ে ২য় অবস্থান করেন মালিহা মোহসিন, ৭০ নম্বর পেয়ে ৩য় স্থান অধিকার করেন তাহিয়া তুজ চারা এবং ৬৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করেন তামান্না আক্তার।
মেধা তালিকায় প্রথম জনের সিজিপিএ’র প্রমাণপত্রে ঘাটতি থাকায় মেধা তালিকা থেকে দ্বিতীয় জনকে অর্থাৎ মালিহা মহসিনকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন উপাচার্য ড কাজী আজিজুল মওলা। সুপারিশ চূড়ান্ত করে অফিস ত্যাগ করেন উপাচার্য। তাঁর সুপারিশ অনুসারেই মালিহা মহসিনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগপত্র ইস্যু করেন রেজিস্ট্রার। কিন্তু ঐদিন বিকেল ৫ টায় সিলেট শহরের বাসা থেকে আবার ক্যাম্পাসে চলে আসেন উপাচার্য আজিজুল মওলা। ক্যাম্পাসে এসে সোজা প্রবেশ করেন রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। আদেশ দেন সুপারিশ পত্রটি তাঁকে ফেরত দিতে। রেজিস্ট্রার সুপারিশপত্রটি ফেরত দিলে তিনি নিজ হাতে চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী মালিহা মহসিনের নাম কেটে সুপারিশ করেন মেধা তালিকায় চতুর্থ হওয়া তামান্না আক্তারকে।
শুধু তাই নয়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা করায় তৃতীয় জন তাহিয়া তুজ চারাকে বাদ দেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ফাইনাল সেমিস্টারের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, কোন প্রার্থী যদি তাঁর যোগ্যতা দিয়ে লিখিত, ভাইভা এবং ডেমু পরীক্ষায় পাশ করে থাকেন তাহলে শুধু মাত্র লিডিংয়ে পড়ালেখা করায় তাঁকে নিয়োগ বঞ্চিত করা চরম অন্যায় ও বৈষম্যের শামিল। আমরা এই অনিয়মের তীব্র বিরোধিতা করছি।
শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, মেধা তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে সর্বনিম্ন নম্বর প্রাপ্ত সর্বশেষ জনকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সুবিবেচিত সিদ্ধান্তকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলার স্বেচ্ছাচারিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান জাহাঙ্গীর আলম এবং উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলার সাথে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.