মো. শরীফ উদ্দিন।।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সদ্য সরকারিকৃত কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন-ফি আদায় এবং শিক্ষক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞার দ্বারা পাঠদান কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে একধরনের অস্হিরতা বিরাজ করছে। চলমান এ সংকটের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ মহতী উদ্যোগ অনেকটাই হিতে বিপরীত দিকে যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এমতাবস্থায়…….
১. সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন ও ফি নির্ধারণ
২. শিক্ষক-কর্মচারীদের শূন্য পদ পূরণের দ্বারা পাঠদান কার্যক্রমের স্থবিরতা দূরীকরণ
অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে এ দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হলে এর আগে সরকারকে অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের ad-hoc নিয়োগ সম্পন্ন করা উচিৎ।
অর্থাৎ সকল সমস্যার মূল হলো ad-hoc নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়া। সরকারের উচিত সরকারিকরণের কাজ কেন দেরি হচ্ছে এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা। এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা কি করছেন সে হিসেব নেয়া। সর্বোপরি কাজটি শেষ করতে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সদ্য সরকারিকৃত কলেজগুলোর সংগঠন ‘সরকারি কলেজ স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতি(সকস্বাশিস)’ এর ৫ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব সোহরাব হোসেনের সাথে একটি সভায় মিলিত হয়। আমিও একজন সদস্য হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সদ্য সরকারিকৃত কলেজেগুলোর শিক্ষকদের পক্ষে ৬টি লিখিত দাবি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দাবিগুলো নিম্নরূপ:
১. দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ সৃজন এর কাজ সম্পন্ন করে ad-hoc নিয়োগ প্রদান করা
২. শতভাগ চাকরির অভিজ্ঞতা গণনা করা
৩. বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ ও ক্যাডার মর্যাদা প্রদানের ব্যবস্থা করা
৪. পূর্ববর্তী এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান মানে প্রথম প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ থেকে অভিজ্ঞতা গণনা করা
৫. জিও এর তারিখে যাদের বয়স ৫৯ বছর ছিল তাদের সকলকে সরকারিকরণের অন্তর্ভুক্ত করা এবং
৬. সরকারি পদ সৃজন প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কাগজপত্র সহজীকরণ করা
আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি হলো ad-hoc নিয়োগ প্রদান করা। সিনিয়র সচিব মহোদয় এ ব্যাপারে বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ৩ মাসের আল্টিমেটাম দেয়া আছে। হয়তো সেটা আরেকটু বেশি লাগতে পারে।”
আমরা সিনিয়র সচিব মহোদয়ের কথায় শতভাগ আশাবাদী। তবে সেটা অবশ্যই ৬ মাসের বেশি যেন না হয়।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ১৪ অক্টোবর শিক্ষা ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘শিক্ষা সেবা সপ্তাহ-২০১৯’ এর উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে বলেন, “শুধু আর্থিক অনিয়মই দুর্নীতি নয়, নিজের কাজ সঠিকভাবে যথাসময়ে না করাও দুর্নীতি।”
মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়কে বলবো এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা সঠিকভাবে তাদের কাজ করছেন কি-না তা দেখার দায়িত্ব আপনার। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়ায় প্রায় চার বছর অতিক্রম হয়ে গেছে কিন্তু এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোন সুনির্দিষ্ট সময় শোনা যাচ্ছে না। বিষয়টি আপনার সুবিবেচনার উপর রাখলাম।
ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কর্মকর্তা সঠিক সময়ে না করে যদি কাজে বিলম্ব ঘটায় তাহলে সেটাও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়বে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে রয়েছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে তাঁর চলমান শুদ্ধি অভিযান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিজ দল থেকে শুরু করা এ অভিযানের কঠিন আক্রমণ থেকে বাদ পড়ছে না কেউই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ সরকারিকরণের কাজে কেউ ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তারা অবশ্যই এ অভিযানের আওতায় আসবে বলে বিশ্বাস করি।
সবশেষে ad-hoc নিয়োগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে চলমান সংকট নিরসনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক-
প্রভাষক, বিশ্বনাথ সরকারি কলেজ
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.