নন্দীগ্রামের সেই অধ্যক্ষ মোশাররফের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়নি দুই মাসেও!
ইসলামপুর ভুঙ্কুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলাধীন ইসলামপুর ভুঙ্কুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন অবৈধ ভাবে চাকুরী বৈধকরার নিমিত্তে জালজালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অনুমোদিত গভর্নিং বডির সভাপতির পদ বাতিল চেয়ে করা আবেদনের তদন্তের লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চিঠি ইস্যুর দুই মাস পার হলেও এখনও তদন্ত কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ঠ তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্টার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে তদন্তের নির্দেশ এবং সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রেরণের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করে। নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই চিঠি ইস্যু করা হয় এবং বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তি ব্যতিরেকে সরেজমিন তদন্ত করতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়, বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলাধীন ইসলামপুর ভুঙ্কুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন অবৈধ ভাবে চাকুরী বৈধকরার নিমিত্তে জালজালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অনুমোদিত গভর্নিং বডির সভাপতির পদ বাতিল চেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজাদুর রহমান অভিযোগ দাখিল করেন। এমতাবস্থায় অভিযোগ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ব্যতিরেকে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ রেজিস্টার বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
ইসলামপুর ভুঙ্কুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজাদুর রহমান সহ প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির আটজন সদস্য ও শিক্ষক স্বাক্ষরিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় তাহার আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং বোর্ডকে ভুল বুঝিয়ে তার অবৈধ চাকরিতে যেন কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য মনগড়া লোককে সভাপতি মনোনয়নের আবেদন অনুমোদন করিয়ে নেন গত ২৫/০৬/২০২৩ইং তারিখে। যা সম্পূর্ণ আইন ও এখতিয়ার বহির্ভূত। যেহেতু এমপিও নিতিমালা-২০১৮ (২৩নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) (১৭.৩) অসত্য তথ্য প্রদান, যে গোপন করা ভুয়া বা জাল কাগজ পত্র দাখিল, প্রাপ্যতা না থাকা স্বত্বেও আবেদন পত্র প্রেরণ করার কারণে এমপিও ছাড়করণে অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান/শিক্ষক কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডি দায়ি থাকিবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।) অনুযায়ী আর্থিক বিধি লংঘন।
এছাড়াও মোঃ মোশাররফ হোসেন গত ০১/০৬/১৯৯৭ইং তারিখ হতে ১৯/০২/২০১১ইং তারিখ পর্যন্ত নাংলু এমকেএম ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে অবৈধ ভাবে চাকরি করিয়াছেন। যাহার অবৈধ চাকরি ০১/১২/২০১১ইং তারিখের পরিদর্শন ও নিরিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাহার স্মারক নং-ডি আই এ/বগুড়া/৪০৮-এম/রাজ। সূত্র নং শিম/শাঃ ১৪ অভি/০১-৩ ২০০৯/১৫০ তারিখ ০৬/০৪/২০১১ ইং প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। মোঃ মোশাররফ হোসেন গত ১৪/০২/২০১১ইং তারিখে নিয়োগ বোর্ডেও সুপারিশ ক্রমে ১৭/০২/২০১১ইং তারিখের নিয়োগের প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলার অন্তর্গত ধুনট উপজেলাধীন এম কে এম ফাজিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ পদে ২০/০২/২০১১ইং তারিখে যোগদান করেন। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাষক পদটি অবৈধ হিসাবে প্রমাণিত হয় বিধায় উপাধ্যক্ষ পদে এমপিও ভুক্তির সুযোগ নাই মর্মে ২৩/০৪/২০১২ইং তারিখে যাহার স্বারক নং-১জি-১২১৯-বিঃ/২০০৯/২৭৬৩/২ মাদ্রাসা অফিসে একখানা অবগতি পত্র প্রেরণ করেন। এছাড়াও তাহার আরবি প্রভাষকের বেতন ভাতাদী স্থগিত সহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২২/০৫/২০১২ইং তারিখে একখানা বগুড়া জেলা প্রশাসক মহোদয় ও বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন যাহার স্বারক নং- ৯এ/১৮/অডিট/১২।
অভিযোগে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদিত পুনরায় সভাপতি মনোনয়ন বাতিলসহ ও দূর্নীতি গ্রস্থ অবৈধ অধ্যক্ষ মোঃ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ততের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনার মর্জি হয়।
অভিযোগকারী ইসলামপুর ভুঙ্কুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজাদুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেলো অথচ তদন্ত এখনও শেষ হলো না। আমি এবং কমিটির লোকজনের সংশয় তৈরি হয়েছে। কেন দেরি হচ্ছে তা তো বলতে পারব না। এখানে স্বারক নম্বর আছে, সেগুলোর সূত্র ধরে খোঁজ নিলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় কিভাবে কমিটি করে আনেন সেগুলো তো পরিস্কার।
দুই মাস পার হলেও এখনও কেন তদন্ত শুরু করতে পারেননি তা জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ হুমায়ুন কবির শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের একত্রে এখনও হাজির করা যায়নি। তারা কিছুটা সময় চেয়েছে।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা তদন্তকারী কর্মকর্তা নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ গাজিউল হক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। স্বাক্ষীদের মতামত নিচ্ছি। এখনও সকল স্বাক্ষীদের মতামত পায়নি। দ্রুতই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্টার মােঃ সিদ্দিকুর রহমানের অফিসিয়াল মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ‘জালিয়াতি করে ১৩ বছর ধরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন’ শিরোনামে গত ২৮ অক্টোবর এবং ‘প্রভাষক পদে মাউশি এমপিও স্থগিত করলেও অধ্যক্ষ পদে বেতন দিচ্ছে ডিএমই‘ শিরোনামে গত ৯ নভেম্বর শিক্ষাবার্তা’য় অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেনের অবৈধ নিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে অচিরেও পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়