এইমাত্র পাওয়া

এই উপাচার্য সরবেন কি?

এস এম নাদিম মাহমুদ :

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জানতে না পারলেও মেয়েটি গত এক সপ্তাহে জানতে পেরেছে তা হলো উপাচার্যের কাজ কী! জিনিয়ার ওসিলায় সারাদেশ জেনেছে উপাচার্যের কাজ কী।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা অধ্যাপক নাসিরউদ্দিনকে দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। জিনিয়াকে উপাচার্যের ক্ষমতা দেখাতে এক সপ্তাহে সময় লাগলেও শিক্ষার্থীদের লেগেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এক লাফে চৌদ্দটি দাবি মেনে নিয়ে নোটিশ জারি করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। নিজের পায়ের মাটি জোগাড় করতে উপাচার্য নাসিরউদ্দিন উঠে পড়ে লেগেছে। কিভাবে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে মিনি ক্যান্টমেন্ট গড়ে তুলেছেন তা এই চৌদ্দটি দাবি মেনে নেয়ার মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হলো।

যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের দুনীর্তি নিয়ে মেয়েটি সংবাদ করেছিল, সেই ম্যুরালটির কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয় ১৪ টি আদেশের মধ্যে ১২ টিই হয়েছে এই বাছুর মেয়েটির সাংবাদিকতার গুণে। তিনটি সংবাদে উঠে এসেছিল, উপাচার্য নাসিরউদ্দিন কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ক্ষমতার দাপটে দমিয়ে রেখেছিল। মিথ্যাচার করে পার পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা আর সম্ভব হলো না।

যে শিক্ষকরা গত কয়েকদিন ধরে উপাচার্যের চাপে এই মেয়েটির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে উপাচার্যের ওহি প্রচারে ব্যস্ত ছিল, শেষ পর্যন্ত তারা জিনিয়ার পথই অনুসরণ করলো। পনের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি বলে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে গড়ে উঠা বিদ্যাপীঠের কালো অধ্যায়ের গল্প।

প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে জিনিয়া, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতির রুখতে আশা জাগিয়েছে এইসব নিপীড়িত শিক্ষকদের। আমি গত কয়েকদিন অন্তত অর্ধডজন পরিচিত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এইটুকু জেনেছিলাম, এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে পারে না। সরকারও তার লাগাম টানতে পারে না। নারী কেলেঙ্কারি, ভর্তি বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতিতে শিক্ষক নিয়োগসহ এমন কোন কাজ নেই এই উপাচার্য করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজের বাপের ধন মনে করা এই শোষক উপাচার্য মনে করেছিল, বহিষ্কার, পদোন্নতি আটকে দেয়া, বিদেশে স্কলারশিপ পেলেও যেতে না দেয়া, শিক্ষার্থীদের বেতন নিজের মত করে বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা গত কয়েক বছর দিনে বিনা বাধায় করে এসেছিলেন। কিন্তু সেটার দিন বুঝি ফুরিয়ে গেল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর পথ দেখছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আগে এই উপাচার্যকে সরিয়ে নেন। দেশে এখনো শত শত ভালো ভালো যোগ্য মানুষ রয়েছে। এ্মন অর্থব উপাচার্য সরানোর জন্য শিক্ষার্থী/শিক্ষকদের আন্দোলনের চেয়ে সরকারের সদিচ্ছ্বায় যথেষ্ট।

বিশ্বাস রাখি, উপাচার্যের রাহু থেকে মুক্ত হয়ে শিগগির বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদ্যাপীঠ হিসেবে ফিরবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা জানার জন্য আর কোন শিক্ষার্থীকে স্ট্যাটাস দিতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বভাবসুলভ আচরণের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান তৈরি, জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান বিতরণ করা।

লেখক : গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.