এইমাত্র পাওয়া

এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন অক্টোবরে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আগামী মাসে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে সর্বশেষ জটিলতাও কাটবে এবং এরপরই প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তখন প্রজ্ঞাপন জারি করতে আর কোনো বাধাই থাকবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রজ্ঞাপন যে দিনই জারি হোক, তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ১ জুলাই থেকেই এমপিওর সুবিধা পাবেন।

সচিব বলেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারত থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে তার স্বাক্ষরের পর এমপিওভুক্তির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশোধিত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সকল কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব কয়টি প্রতিষ্ঠানকেই এমপিওর আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়ে গত কয়েক বছর ধরে এমপিওর দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, এমপিওভুক্তি নিয়ে আমরা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন ও হতাশার মধ্যে রয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কাছ থেকে দেড় মাস সময় নিয়েছিলেন। এখন ছয় মাস সময় অতিবাহিত হতে চলেছে। যদিও মন্ত্রী বর্তমানে তার স্বামীর অসুস্থতাজনিত কারণে অনেকটাই বিব্রত। আমরা তার স্বামীর আশু সুস্থতা কামনা করছি।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ১৭-১৮ বছর ধরে বিনা বেতনে এই পেশায় রয়েছে জানিয়ে ডলার আরও বরেন, অনেকের বয়স শেষের দিকে। আশা করি, মানবিক বিবেচনায় নীতিমালার শর্ত শিথিল করে হলেও প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ) শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকার ঘষা-মাজা শেষ হয়েছে। তবে তালিকায় কতগুলো স্কুল, কলেজ, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থান পাবে তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।

সূত্র জানায়, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার শর্তেই এমপিওভুক্ত করা হবে বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রাথমিকভাবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে আগামী তিন বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে এক হাজার ৭৬৩টি স্কুল ও কলেজ এ তালিকায় স্থান পেতে পারে। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। তবে এর সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। অস্থায়ী অনুমোদন বা তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া শর্ত যথাযথভাবে পূরণে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির সুবিধা বাতিল করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ধরন অনুসারে আলাদা আলাদা পরিপত্র জারি করা হবে। নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা পরিপত্র জারি হতে পারে। একই পরিপত্রে সব প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন দেয়া হলে নানা জটিলতার সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জটিলতা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

১৪ আগস্ট শর্ত পূরণ করা প্রায় দুই হাজার ৭০০ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল বলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এমপিওর জন্য প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক জাবেদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। কিন্ত সে তালিকা দফায় দফায় ফেরত আসছে এবং বারবার সংশোধন করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় রেখেই নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে জারি করা নীতিমালাকে প্রাধান্য দিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালার কঠোর শর্ত কিছুটা শিথিল করে হাওর, চরাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, অনগ্রসর এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও আওতায় আনার এবং বাদ পড়া উপজেলায় অন্তত একটি করে হলেও প্রতিষ্ঠান এমপিওর তালিকায় স্থান দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো তালিকায়।

জানা গেছে, সারাদেশের ৮৯টি উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সমতার স্বার্থে ওইসব উপজেলায় শর্ত শিথিল করে শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওর, চরাঞ্চল, নারীশিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। নীতিমালা ও যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে না পারাদের এমপিও আওতায় আনতে শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে, তা যোগ্যতার নূন্যতম ৫০ নম্বর প্রাপ্তি সাপেক্ষে।

২০১৮ সালে জারি করা জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করা বা যোগ্য হিসেবে দুই হাজার ৭৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করেছে মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটি। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ এক হাজার ৬২৯টি এবং মাদরাসা ৫৫১টি ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি।

সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫১টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, এক হাজার দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৯৪টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের কলেজ রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট আবেদন জমা পড়েছিল ৬ হাজার ১৪১টি।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.