মো. নিজাম উদ্দিন।।
১৮ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের একটাই প্রানের দাবি হলো মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণ করা। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা কত আন্দোলন, অনশন, মিছিল, মিটিং করে করে আসছি। ফল স্বরুপ সরকার ৪৩১২ টা মাদ্রাসার এমপিও দেওয়ার কথা ভাবছে। শুনে খুবই খুশি হইলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
১৮ হাজারের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার ৩শ এমপিও এবং সরকারিকরণের পরিবর্তে এমপিও মেনে নেয়া কতটা উপকার হয়েছে বুঝে আসছেনা। আমরা আন্দোলন করেছি সবগুলো প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের। বিনিময়ে পেয়েছি মাত্র ৪৩শ এমপিওর খবর। এগুলোর ও বাস্তবায়ন কতদূর জানা নাই। এমপিওর ঘোষণা যখন আসলো তখন উচিৎ ছিল প্রতিবাদী ঝড় তোলা যে আমরা এমপিও চাইনা জাতীয়করণ চাই! অর্থাৎ ৪৩শ এমপিও মেনে নেয়া হলেও তা ক্ষোভের কন্ঠে মেনে নেওয়া উচিৎ ছিল! তাহলে আজ এমপিওতে এত আবহেলায় পড়ে থাকতে হতনা। এমপিও যেহেতু নিরবে মেনে নিয়েছি সামনে আরও কত অবহেলায় ভূগতে হয় আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন।
সরকার চাইলে কি সবগুলো মাদ্রাসা জাতীয়করণ করতে পারতো না? ২৬ হাজার প্রাইমারি কেমনে জাতীয়করণ করা হয়েছে। তারা কোন পদ্ধতিতে আন্দোলন করে সরকারি হলো। আমরা তো তাদেরই আপন ভাই। জাতীয়করণের কথা বাদ দিলাম, সবগুলো মাদ্রাসাকে কি এমপিও করতে পারতো না? তাও বাদ দিলাম। কারন অনেক প্রতিষ্ঠান অবহেলায় ভূগতে ভূগতে কোমর ভেঙ্গে গেছে। ঐ গুলোর কোমরে তেল-মালিশ দ্বারা সুস্থ করে আবার দাড় করাতে হবে।
সর্বশেষ যে ৪৩১২ টা মাদ্রাসা এমপিওর যে খবর শুনেছি সেখানেও ঘাবলা রয়ে গেল। কখনো ৪৩১২ টা, কখনো ১৫১৯ টা, কখনো ১০০০, আবার কখনো বা খবর নাই। সঠিক খবরটা আজ পর্যন্ত আমাদের জানা নাই। আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষক নেতা নিশ্চিত একটা খবর দিতে পারবেন যে কতটি মাদ্রাসা এমপিও হবে বা কবে হবে! অথচ নেতাদের প্রত্যেকটি গ্রুপই দাবি করে আসছে তাঁরাই সঠিক। নেতাদের কয়েকটি গ্রুপ হওয়ার ফলে সেখানে তো প্রতিযোগিতা মূলক অনেক কাজ হওয়ার কথা। বাস্তবে প্রতিযোগিতা মূলক কি হচ্ছে দেখুন একে অন্যদের কুৎসা রটনা করা, দোষ খুজে বের করা, গাল মন্দ করা ইত্যাদি। এসবের প্রতিযোগিতায় আমরা শিক্ষকরাও অনেক সময় জরিয়ে পড়ি।
যাই হোক, উপরের এই চিত্র দেখে বুঝতে পারছেন আমরা আমদের দাবী কতটুকু আদায় করতে পেরেছি। যে সর্বনিম্ন দাবী টুকু আদায় করেছি তা বাস্তবায়নে আমাদের দায়িত্বশীলদের কোন অস্বীত্ব খুজে পাচ্ছিনা। দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ! রাগ করবেন না। কেন আপনাদের অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছিনা শুনুন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ৪৩১২ টি মাদ্রাসা অনুমোদন করেছেন। এগুলো তাঁর বিশেষ অনুমোদন ও বিশেষ এমপিএর পর্যায়ে রাখা উচিৎ ছিল। আপনারা কি লক্ষ্য করতে পারছেন যে স্বাক্ষর হওয়া ৪৩১২ টি প্রতিষ্ঠানকে নন-এমপিও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার সাথে যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ীর ভবিষ্যৎ আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
যেমন এবছর নন-এমপিওদের সাথে মিল করে ধরুন আমাদের স্বতন্ত্র ১ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিও ছাড়ল! বাকি গুলোর কি হবে! প্রধানমন্ত্রীর আনুমোদন পেয়েও বছরের পর বছর অবহেলিত থাকতে হবে! পরবর্তিতে আবার কবে এমপিও ছাড়বে তা কে জানে। হয়তো দশ-বারো বছর পরে কোন অর্থ বাজেটে ঘোষণা আসতে পারে এবছর ১ হাজার, ২ হাজার বা ৩ হাজার নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিও করা হবে। শুরু হবে যোগ্যতা যাচাই-বাচাই ও ভাগা-ভাগি। ২ হাজারের ঘোষনা আসলে- স্কুল ১ হাজার, কলেজ ৫`শ, মাদ্রাসা ৩`শ, আর আমাদের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী ২`শ। অর্থাৎ সরকার ১০ বছর পর পর এমপিও ছাড়বে। আর ১০-১২ বছর পর পর আমাদের স্বতন্ত্র ২-৩শ করে প্রতিষ্ঠান এমপিও হবে। তখন আর কিছু করার থাকবেনা।
আমরা নন-এমপিও মাধ্যমিকদের পর্যায়ের না। আমাদের এমপিও তাদের সাথে মিল করা হবে কেন? আমরা প্রাথমিক স্থরের প্রতিষ্ঠান যে গুলো একই সাথে সব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ীর তুলনায় সংখ্যয় প্রায় দ্বিগুণ ২৬ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান একই সাথে জাতীয়করণ করেছেন যে সরকার। তাঁর কাছে মাত্র ৪৩১২ টি মাদ্রাসা সরকারি না তাও আবার এমপিও নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মানে কি বুঝলাম না!
প্রশ্ন হচ্ছে…
জাতীয়করণের পরিবর্তে এমপিও মেনে নেওয়া হবে কেন?
১৮ হাজারের জায়গায় কেন ৪৩১২ টা মেনে নেওয়া হবে?
সর্বশেষ ৪৩১২ টা নিয়ে টালবাহানা সহ্য করা হবে কেন?
দায়িত্বশীলদের কাছে জাতে চাই!!
মো. নিজাম উদ্দিন
প্রধান শিক্ষক
লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেক নেয়া
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.