আশরাফ চৌধুরি।।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক (সমাশি)মূলত ২০০৯-২০১০-২০১১ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাচগুলোর সময়ের প্রয়োজনে পাশাপাশি থাকতে প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন। শিক্ষকতায় যোগদানের পর আমরা দেখতে পেলাম আমাদের স্বাগত জানাতে আমাদের অধিকাংশ সিনিয়র সহকর্মী দ্বিধাগ্রস্ত। হয়তো, তারাও তাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে এরুপ আচরণ পেয়ে থাকবেন। আরো অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম তারা নিজেরাও এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এমনকি একই ব্যাচের শিক্ষকরা পরস্পরকে চিনেন না বাসমাশিস নামে একটি সমিতি আছে। সবাই সকাল বিকাল নিয়ম করে সেই সমিতিকে গালিগালাজ করে আর- “সব গেল, সব গেল” বলে বিলাপ করে।
কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণ এই অচলায়তন ভাঙ্গার চেষ্টা নিলেন। শুরু হল কিছু `ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো` টাইপের তরুণ শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম। সেখানেও শতমত- দ্বন্দ্ব-বিচ্ছেদ-হাল ছেড়ে দেওয়া-মান অভিমান ও চোটপাটের যুগপৎ মিশেল। তবুও মাটি কামড়ে পরে থাকাদের ব্যাপক প্রচেষ্টায় সারাদেশব্যাপী নতুন শিক্ষকদের সাথে পারস্পরিক মতবিনিময়ের পর গঠিত হলো:।। সমাশি `০৯`১০`১১ ব্যাচ।। প্রথম দিকে সিনিয়ররা ঠাট্টা-মশকরা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও পরবর্তিতে সবাই আমাদেরকে সিরিয়াসলি নিলেন। আমাদের দেখাদেখি সিনিয়রদেরও ব্যাচ ভিত্তিক নানা সংগঠন গড়ে উঠতে থাকলো। (যদিও এটা তারা কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছেন সেটা তারাই বলতে পারবেন।)
আমরা দেখলাম আমাদের সংগঠন বাসমাশিস আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে ঠিক ভাল চোখে দেখছে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সংঘাতে যাব না। আমরা বিপ্লব নয় সংস্কারের পথে হাঁটলাম। সেপারেশন নয়, কোঅপারেশনের পথ বেছে নিলাম। আমরা উপলব্ধি করলাম পরিবর্তনের জন্য বাইরে থেকে ঢিল ছুড়ে লাভ নেই; ভেতরে প্রবেশ করেই যা করার করতে হবে। আমরা আরো বুঝতে পারলাম মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান প্রবেশপদ নবম গ্রেড। এ লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না। এতে সবপক্ষই দুর্বল হবে। গঠিত হলো `সমাশি গবেষণা সেল`। দিনের বেলা সবাই স্কুলে ব্যস্ত থাকার জন্য আমাদের অনলাইন মিটিং চলতো রাতের বেলা। সালমি স্যার আর মইন স্যারের পাশাপাশি আমরা সমাশির কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালিখি চালিয়ে যেতে থাকলাম আমাদের সেই নির্ঘুম রাতগুলোর কথা মনে পরলে যুগপৎ দুঃখ ও সুখে মন ভরে উঠে। (কারণ আমরা এখন নতুনভাবে সক্রিয় হওয়া আমাদের পরবর্তী ও পূর্ববর্তী ব্যাচের শিক্ষকদের কন্ঠে আমাদের এতদিন বলে আসা কথাগুলোর অনুরণন দেখতে পাচ্ছি।) আমরা আরো সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের যত সমালোনাই হোক, আমরা সমালোচনার মাধ্যমে তার জবাব দিয়ে আমাদের সময় নষ্ট করব না। আমরা সমালোচক হতে চাইনি, কর্মী হতে চেয়েছিলাম। তাই সমাশিতে কোন নেতা ছিলনা, এখনো নেই। আমরা চেয়েছি এখানে যার ইচ্ছা আসবে, যার ইচ্ছা চলে যাবে কিন্তু কাজ চলমান থাকতে হবে।
তখন সবাই টাইমস্কেলের কথা বলছিল। আমরা কয়েকজন বললাম আমরাও তো সিলেকশন গ্রেড পাব। আমাদের এই কথা নিয়ে একশ্রেণির সিনিয়র স্যারদের সে কি হাসাহাসি! যেন পুরাতন পাগলের ভাত নেই নতুন পাগলের আমদানির মত ব্যাপার স্যাপার। আমরা কয়েকজন পাগলা সহকর্মী দিনের পর দিন সমিতির কাছে ধর্না দিতে থাকলাম। দেশের কোথাও না কোথাও সভা করতে থাকলাম প্রায় প্রতি সপ্তাহে। সিনিয়র সহকর্মী জনাব সাহাব উদ্দিন মাহমুদ সালমি এগিয়ে এলেন। তার মাধ্যমেই সমিতির সাথে তরুণ শিক্ষকদের সেতুবন্ধন রচিত হলো, যা আগে কখনো হয়নি। জনাব ইনসান আলী ও জনাব জালাল উদ্দীন সরকারের সাথে আমাদের বারবার সাক্ষাৎ হলো। আমরা বাসমাশিস ভেঙ্গে নতুন কোন সমিতি নয় বরং বাসমাশিসকেই শক্তিশালী করতে চাইছি তা সমিতির কর্ণধারদের বুঝাতে সক্ষম হলাম। এভাবে প্রায় দের বছর চলল। আমরা ধানমণ্ডি গভ. বয়েজে সমাশির `শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলন` করলাম ৫/১০/২০১৭ তারিখে। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের মুখপত্র `প্রচেষ্টা` প্রকাশ করলাম। মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন বিষয়ক সমাশির গবেষণাপত্র `প্রস্তাবনা` আকারে বাসমাশিসকে ও তৎকালীন ডিজি স্যারকে হস্তান্তর করলাম। সমাশি বাসমাশিসকে কর্মসুচি দিতে আহবান জানাল। বাসমাশিসও আমাদের কাছে কর্মসুচি পালনের প্রতিশ্রুতি চাইল। আমরাও কর্মসূচি পালন করে দেখালাম। বাসমাশিস আমাদের আস্থায় নিল। বাসমাশিস সালাম স্যারকে আহবায়ক করে টাইমস্কেল/সিলেকশন গ্রেড বিষয়ক উপকমিটি গঠন করল। উক্ত কমিটিতে লিঁয়াজু মেইনটেইন করার জন্য সমাশির জনাব মিজানুর রহমান স্যার ও জনাব জয়নুল আবেদিন স্যারকে যুক্ত করা হলো। বেতনস্কেল ২০০৯ অনুযায়ী দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণি মিলিয়ে টাইমস্কেল প্রাপ্যতা বিষয়ক অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ প্রজ্ঞাপনে টাইমস্কেল এর পাশাপাশি `সিলেকশন গ্রেড` শব্দযুগল যুক্ত করা হয়। এতে সরাসরি ভূমিকা রাখেন জনাব মনোয়ার ইকবাল স্যার, জনাব মাহমুদ সালমি স্যার। আমরা আরো সহয়তা পাই জনাব মইন উদ্দিন স্যার ও জনাব আব্দুস সালাম স্যার ও জনাব দবির উদ্দিন স্যারের। `০৯`১০`১১ ব্যাচের শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তীর দ্বার উন্মোচন হলো। আমরা আমাদের সহকর্মীদের আশ্বস্ত করি। কিন্তু এরপরেও নানামুখি প্রচেষ্টা চালিয়েও যখন সিজি/টিএস এর সলিউশন হলো না, শিক্ষকরা মহামান্য আদালতে গেলেন। সেখানেও সমাশির প্রতিনিধি (জয়নুল স্যার) মামলার বাদী হলেন। রায় হলো, আমাদের প্রাপ্ততার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হলো। আমরা আশাবাদী আমরা অচিরেই অধরা সিলেকশন গ্রেড পাব।
কিন্তু আপনি যত ভালকাজই করুন না কেন আপনার একটা হেটার্স গ্রুপ তৈরী হবেই। আপনি যতই মহৎ হন না কেন আপনার উপর কিছুই না করাদের নির্মম সমালোচনার ছুরি চলবেই। ভাল কিছু করতে চান, আপনাকে এসব মেনে নিতেই হবে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.