এইমাত্র পাওয়া

যে কারণে নিতাই কুমার দেশসেরা কলেজ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

শিক্ষকতা জীবনের ২০ বছরে তিনি এক মিনিটও ক্লাসে দেরি করে আসেননি। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করাতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। শিক্ষার প্রসারে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। জাতি গড়ার এই মহৎ কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। জাতীয় পর্যায়ে তিনি এবার শ্রেষ্ঠ কলেজশিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। ওই শিক্ষকের নাম নিতাই কুমার সাহা। তিনি রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।

নিতাই কুমার সাহা রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক—সব সময় নিতাই স্যারের ক্লাস শিক্ষার্থীতে পূর্ণ থাকে। গত ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি এক মিনিটও দেরি করে ক্লাসে আসেননি। বছরের শুরুতেই তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে নিজের তৈরি বিশেষ ধরনের একটা ক্যালেন্ডার ধরিয়ে দেন। সারা বছর কয়টি টিউটরিয়াল পরীক্ষা নেওয়া হবে, কয়টি ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে, কয়টি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে, কয়টি সাক্ষাৎকার, কয়টি উপস্থাপনা থাকবে—ক্যালেন্ডারে এর উল্লেখ থাকে। প্রতিটির পাশে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ঘর থাকে। সারা বছর এই সব বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীরাই পূরণ করেন। মোট ৩০০ নম্বরের মূল্যায়ন শেষে নিতাই স্যার তাতে স্বাক্ষর করে দেন। তারপর তাতে অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে আসতে হয়। তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়।

শিক্ষক নিতাই কুমার সাহার ভাষায়, পুরস্কার তাঁদের ছোটখাটোই দেওয়া হয় কিন্তু এতে তাঁরা দারুণ উৎসাহিত হন। সব শিক্ষার্থীর মধ্যে যখন তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন তাঁরা খুব সম্মানিত বোধ করেন।

রাজশাহী কলেজ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের র‌্যাংকিংয়ে টানা চার বছর ধরে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিন বছর ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়েও প্রতিষ্ঠানটি সেরা। এবার সেই কলেজের শিক্ষক নিতাই কুমার সাহা জাতীয় পর্যায়ের সেরা কলেজ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। গত বুধবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিতাই কুমারকে শ্রেষ্ঠ কলেজশিক্ষকের পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁকে একটি ক্রেস্ট, সনদ ও আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।

নিতাই কুমার সাহা তাঁর সাফল্যের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে আমার দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেল। এই পেশায় এসেছি ভালোবেসে। এ জন্য ছাত্রদের যতটা দেওয়া সম্ভব, তার সবটুকুই দিতে চাই। এই দেওয়ার ইচ্ছাটা একেবারে ভেতর থেকেই আসতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে ক্লাসে এলে তাদের কিছু লাভ হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের চুলের ভাঁজ থেকে শুরু পায়ের নখ পর্যন্ত অনুসরণ করতে পারে। সেই জন্য আমাকে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের সময়ানুবর্তিতা শেখানোর জন্য আমাকেই সময়মতো ক্লাসে যেতে হয়।’

নিতাইয়ের এই উদ্যোগের কারণে কলেজের ফলাফলেও পাওয়া গেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শ্রেণি থেকে মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন। তার মধ্যে রাজশাহী কলেজেরই ছিলেন ২০ জন। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা চলেই আসছে।

নিতাই কুমার ২৪তম বিসিএস পাস করে শিক্ষকতা পেশায় ঢোকেন। এর আগে তিনি সিলেট এমসি কলেজ ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের মার্চ মাসে রাজশাহী কলেজে যোগদান করেন। ইতিমধ্যেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।

রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ হবিবুর রহমান বলেন, নিতাই কুমার সাহা একজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষে তিনি যথেষ্ট সময় দেন। এ ব্যাপারে তিনি অতুলনীয়। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের যতটা দেওয়ার কথা, তাতে তাঁর কোনো ঘাটতি থাকে না। বরং প্রশাসন যতটুকু আশা করে, তিনি তাঁর চেয়ে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading