এইমাত্র পাওয়া

ঢাবিতে শিক্ষক বাড়ছে গবেষণা কমছে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক ২ হাজারের বেশি। ১৯৮৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬০০। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসংখ্যা বাড়লেও কমেছে তাদের গবেষণাপত্র ও প্রকাশনা। কোনো বিভাগেই শিক্ষক অনুপাতে তা বাড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি, মার্কেটিং, রসায়ন, পদার্থ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান—এই সাত বিভাগের গত ৩০ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে এসব বিভাগে ১৮৮ জন শিক্ষকের অধীনে ২০৮টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সে অনুপাতে ঐ একই বিভাগসমূহে ২৫১ জন শিক্ষকের অধীনে ৩০০টি গবেষণাপত্র বের হওয়ার কথা থাকলে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বের হয়েছে মাত্র ৬০টি। যা প্রায় ৮০ শতাংশ কম।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতার চেয়ে লবিং এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দেওয়া, শিক্ষক রাজনীতিতে মাত্রাতিরিক্ত দলীয়করণ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সে অতিরিক্ত মনোযোগের কারণে শিক্ষকরা গবেষণায় সময় দিতে পারছেন না। এছাড়া গবেষণা খাতে অপেক্ষাকৃত কম বরাদ্দের অভিযোগতো আছেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের এ বেহাল দশা নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বিবরণীতে গবেষণা কম থাকলেও মূলত আমাদের শিক্ষকরা আরো বেশি গবেষণা করছেন। শিক্ষকরা বার্ষিক বিবরণীতে উল্লেখ করার জন্য সেসব গবেষণা সময় মতো জমা দেন না। এটা ঠিক যে, কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা গবেষণায় কম আগ্রহী। তবে অসাধারণ কয়েক জন গবেষকও আমাদের রয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এমন মান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। এছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠনের জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিং অবনমনের কারণ হিসেবে গবেষণাপত্র কমে যাওয়ার কারণকেই দায়ী করছেন প্রবীণ অধ্যাপকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কমে যাওয়ার পেছনে শিক্ষকরাই দায়ী। তবে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

এর বাইরে কয়েক জন শিক্ষক সেমিস্টার পদ্ধতি, টিউটোরিয়াল ক্লাস, থিসিস তত্ত্বাবধান, পরীক্ষা কমিটির দায়িত্ব পালন, সিলেবাস কমিটিতে কাজ করাসহ বিভাগের নানা দায়িত্ব পালনকে গবেষণাপত্র এবং প্রকাশনা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছি। এখানে জ্ঞানচর্চা এখন আর আগের মতো মূল্যায়ন পায় না। যখনই যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মানসিকতা গবেষণা কর্ম বাড়ানোর উপযোগী নয়।

অধিকাংশ শিক্ষকের দাবি, গবেষণার জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ দরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাজেটে তা রাখে না। এ কারণে শিক্ষকরাও গবেষণার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬টি গবেষণা কেন্দে র জন্য বরাদ্দ হয় ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর আগের বছর ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও খরচ হয় ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গবেষণার জন্য ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খরচ হয়। চলতি অর্থবছরে গবেষণা ও বিশেষ গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ করেছে ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটের আকার বিগত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ বাড়লেও গবেষণায় বরাদ্দ কমছে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু ব্যক্তিগত পদোন্নতির জন্য যেটুকু গবেষণা বা প্রকাশনার বাধ্যবাধকতা থাকে তার বাইরে কোনো অ্যাকাডেমিক কাজ শিক্ষকরা করেন না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গবেষণার কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সূত্রঃ ইত্তেফাক


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.