এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়া ও একজন কাজী লতিফ

 আধ্যাপক মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ।।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের মতো বেসরকারি শিক্ষক সমাজের কাছে ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়া’ একটি সুপরিচিত অর্থনৈতিক সংগঠন। শিক্ষক কর্মচারীর কল্যাণসাধন ও বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোই এ সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও সাফল্য। সংগঠনটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত। অধ্যাপক মু. রফিজ উদ্দিন মোল্লা (জন্ম ১৯৪২- মৃত্যু ২০১৪ খ্রি.) ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

শিক্ষক সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষার সংগ্রামে কাপাসিয়ার শিক্ষক সমাজ অত্যন্ত সচেতন ও সুসংগঠিত। এ চেতনাবোধ ও অসংখ্য নিবেদিন প্রাণ ব্যক্তিত্বের সুসমন্বিত উদ্যোগের বাস্তব প্রতিফলন ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়া’। বর্তমানে সংগঠনটি নিছক একটি আঞ্চলিক সংগঠন নয়, বরং তা এখন অবহেলিত বঞ্চিত অসহায় শিক্ষক কর্মচারীর নিরাপদ অবলম্বন ও আস্থার ঠিকানা এবং সমবায় নীতিমালায় নিবন্ধিত একটি জাতীয় সংগঠন। ক্রমশ এ সমিতির কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসংিদী, ময়মনসংিহ, টাঙ্গাইল, কশিোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়য়িাসহ দশেরে বভিন্নি জলোর প্রায় ১০ হাজার বসেরকারি স্কুল-কলজে ও মাদ্রাসার শক্ষিক র্কমচারী এ কল্যাণ সমতিরি সদস্য।

শিক্ষকস্বার্থ সংরক্ষণ ও শিক্ষকের আর্থিক সামর্থ্যবৃদ্ধির মহতিপ্রয়াসের কিংবদন্তিতূল্য সংগঠনের নাম শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, কাপাসিয়া, গাজীপুর। মাত্র ০৫/= (টাকা) সদস্যচাঁদা নিয়ে ১৯৯২ সালে যে সংগঠনের শুভসূচনা, তা আজ কয়েক কোটিটাকার ভাÐার হিসেবে হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীর সেবা, সহযোগিতার অঙ্গিকারে পরীক্ষিত ও কালোত্তীর্ণ আদর্শ স্থাপন করেছে। অবসরপ্রাপ্ত অথবা কর্মরত সদস্যের মৃত্যুতে সমিতি লক্ষাধিক টাকার আর্থিকসুবিধা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এ সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব সমিতির সাধারণ সদস্যবৃন্দের। তাদেরই সহায়তা ও নিরঙ্কুশ সমর্থনে তাদের দ্বারা নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতার সঙ্গে ও নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি’র মূলনীতি হলো:

 ঐক্যই শক্তি,
 দুর্দিনের জন্য সঞ্চয়,
 মানুষ মানুষের জন্য।

বেসরকারি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়ার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও অবদান। বাংলাদেশের বৃহত্তম পেশাজীবী সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়ার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন গত ২৩ আগস্ট, ২০১৯ শুক্রবার সকাল ৯ টায় গাজীপুর মহানগরীর ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ সংলগ্ন চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও বর্ষীয়ান শিক্ষকনেতা মোঃ শাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও তারাগঞ্জ এইচ এন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাহাব উদ্দীন আহমেদ।

 

সম্মেলন উদ্বোধন করেন চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন পিরুজালী উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন। এ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অডিট রিপোর্ট পেশ করেন সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সচিব কাজী আবদুল লতিফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আইন উদ্দিন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোটের গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন প্রধান, কাপাসিয়া ডিগ্রিকলেজের অধ্যাপক মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ, প্রবীণ শিক্ষক নেতা ফখরুদ্দিন মৃধা প্রমূখ। উপস্থিত হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারীর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের ভিত্তিতে আবারো শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়ার চেয়ারম্যান ও সচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন ও জনাব কাজী আবদুল লতিফ।

জনাব কাজী আব্দুল লতিফ বিএসসি একজন আদর্শ শিক্ষক, সংগঠক ও প্রবীণ শিক্ষকনেতা। তিনি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সচিব (১৯৯২ থেকে…..)।

আমারা জানি, একটি সংগঠন এককভাবে বা কারো একক প্রয়াসে গড়ে ওঠে না, বা একটি সংগঠন টিকে থাকবার জন্য কারো একক উপস্থিতি একান্তই পরিহার্য নয়- একথা সত্য হলেও বলবার অপেক্ষা রাখে না, নতোর ইংরজেি প্রতশিব্দ হলো খবধফবৎ. ইংরজেি একটি প্রবাদ বাক্যে খবধফবৎ. বা নতো সর্ম্পকে বলা হয়ছেনেতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Leader. ইংরেজি একটি প্রবাদ বাক্যে Leader. বা নেতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, He is the Leader, Who knows the way, who go’s the way and who show’s the way. অর্থাৎ ‘যিনি সঠিক পথ সম্পর্কে জানেন, সেই পথে চলেন এবং মানুষকে পথ দেখান তিনিই নেতা।’

অর্থাৎ নেতাকে জানতে হবে জীবন চলার সঠিক পথ সম্পর্কে; শুধু জানলেই হবে না বরং তাঁকে অনুসরণ করতে হবে সেই পথ এবং একইসঙ্গে তিনি অনুসারীদেরকে সেই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। এসব বিবেচনায় বলা যায়, কাজী আব্দুল লতিফ ও ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়া’ সমার্থক অভিধা।

প্রসঙ্গতঃ সমিতির এগিয়ে যাওয়ার তাৎপর্য উপলব্দি করে আমি এর কতিপয় সাফল্যগাথা ও অর্জন নিচে উপস্থাপন করলাম:
 ১৯৯২ থেকে ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত কাপাসিয়া শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উপকারভোগীর সংখ্যা ৩,৩৪৬ জন এবং তাঁদের প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধার পরিমাণ ১১,৪৬,৫২,১০০/= (এগার কোটি ছেচল্লিশ লাখ বায়ান্ন হাজার একশত টাকা মাত্র)।
 সংগঠনটি ০১ জানুয়ারি ২০১৮ হতে ৩০ জুন ২০১৯, মাত্র দেড় বছরে ৫৩৬ জন শিক্ষক কর্মচারীকে কল্যাণ সুবিধা বাবদ ২,১৯,২৬,৯১৭ (দুই কোটি ঊনিশ লাখ ছাব্বিশ হাজার নয়শত সতেরো টাকা) বিতরণ করে।

 সংগঠনটির ঋউজ এর পরিমাণ ৪,৯০,০০,০০০/= (চার কোটি নব্বই লাখ টাকা মাত্র)। ঋউজ থেকে বার্ষিক মুনাফা বাবদ আয় হয়েছে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা।

 ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত কাপাসিয়া শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উদ্বৃত্ত তহবিল ৬,৩৮,৬৯,২৬৫/= (ছয় কোটি আটত্রিশ লাখ ঊনসত্তর হাজার দুইশত পঁয়ষট্টি টাকা মাত্র)।

বস্তুতঃ ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়া’ সেবামুখী ও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীর কল্যাণধর্মী একটি অর্থনৈতিক সংগঠন। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিযায় সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি সমিতির সদস্য। বর্তমানে আমি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি কাপাসিয়ার কার্যনির্বাহী কমিটির গর্বিত সদস্য। আমি সমিতির আগ্রযাত্রা ও সাফল্য কামনা করি।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া গাজীপুর 

 


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.