এইমাত্র পাওয়া

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটতে হবে এবারো

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে প্রতি বছরই আলাদা প্রস্তুতি থাকে ভর্তিচ্ছুদের। তাই এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই প্রস্তুতি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রতীক্ষার পরীক্ষায় অংশ নিতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।

বিশেষ করে দেশের এক প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটতে ছুটতে বিরক্ত হয়ে যান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতে ইতিবাচক সাড়া না দেয়ায় ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে। একই সাথে ব্যয় করতে হবে প্রচুর অর্থ।

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এ বছরের ভর্তিপরীক্ষা। ৪৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৭২ হাজার আসনের জন্য লড়বেন এইচএসসি উত্তীর্ণ ৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, দেশের এক প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া খুবই কষ্টদায়ক এবং ব্যয়বহুল। গত কয়েক বছর ধরে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার কথা শুনে আসছি। কিন্তু এখনো তা আলোর মুখ দেখছে না। ফলে অতিরিক্ত অর্থ আর সময় ব্যয় করে নিরাপত্তাহীন হয়েই দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিতে হচ্ছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আলতাফ আল হোসেন গত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন এ প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, যেদিন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হলো, সেদিনই ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা। এক দিনে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে খুবই কষ্ট হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রাতে রওনা করেছিলাম শাবিপ্রবিতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। আগে থেকে ট্রেনের টিকিট না কাটার কারণে অসম্ভব ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাসের ছাদে করে সিলেট যাই। এর জন্য আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। এখনো সে সময়ের কথা মনে হলে ভয় লাগে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাতুল হাসান বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দিতে যাই। কিন্তু হঠাৎ করে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে যান। ফলে আমাকে কে নিয়ে যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত সাহস করে একাই গিয়েছিলাম।

আয়েশা জাহান নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই। এ সময় আমার সাথে থাকা বড়ভাই অসম্ভব অসহায় হয়ে পড়েন। আমাকে নিয়ে কী করবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। চট্টগ্রাম পৌঁছেই আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করেন। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা দিতে পারলেও সে সময়ের কথা আজও ভুলতে পারিনি।

গত বছর ঢাবি, জাবি, জবি, রাবি, কুবি আর চবিতে ভর্তিপরীক্ষা দিয়েছেন রাহেলা সেতু। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় সাথে ছিলেন তার বাবা আতিকুর রহমান। আতিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি আবাসন সংকটে পড়েছিলাম। আর একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার বিড়ম্বনা তো ছিলোই।

সাজ্জাদ হোসেন নামের এক অভিভাবক বলেন, সময়ের সাথে সমন্বয় করে মেয়েকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া কঠিন ছিলো। আমি একটি বেসরকারি চাকরি করি। ফলে ছুটিও পাওয়া যাচ্ছিল না। ছুটির ব্যবস্থা করতে না পারাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে পরীক্ষাই দিতে পারেনি।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক ধরে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার বিষয়ে কাজ করে যাছে ইউজিসি। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষার বিষয়ে নেতিবাচক রয়েছে। তাই শতভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আনা যায়নি। তবে এ বছর প্রথমবারের মতো কৃষি ও কৃষিতে সমমনা সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিরোধিতা করার মূল কারণ ফরম বিক্রির টাকা। ভর্তি ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোটি কোটি টাকা আয় করে। আর এই অর্থ পরীক্ষার সাথে সম্পৃক্তরা ভাগ করে নেয়। তবে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সমন্বিত পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসন খর্ব হওয়ার দোহায় দিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে চান না বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।

তিনি বলেন, সময়ের সাথে পদ্ধতি বদল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে অনেকেই পুরাতনকে আকড়ে থাকতে চান। আমার মনে হয়, স্বায়ত্বশাসনের কথা চিন্তা না করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি ভাবা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপাচার্য বলেন, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো যেতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা এখনো এটা করতে পারিনি। আশা করছি শিগগিরই এটা করা সম্ভব হবে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ এর আগে বলেছিলেন, সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা চালুর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শতভাগ সহযোগিতা দরকার। কিন্তু আমরা এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক সিদ্ধান্তে আনতে পারিনি। সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পৃথক কমিটি গঠন করেছেন। আশা করি এবার সমন্বিত ভর্তি বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদন (২০১৭) অনুসারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরিসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে ২১ লাখ ২০ হাজার ৯২৫।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে মোট আসন ৬৪ হাজার। এ বছর আসন বেড়ে প্রায় ৭২ হাজার হয়েছে। মূলত ভর্তি পরীক্ষার জন্য এ ৭২ হাজার আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই নয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন আবেদনের সুযোগ পাওয়া সকল শিক্ষার্থী। আর বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসএসসি এবং এইচএসসি মিলিয়ে জিপিএ-৬.৫০ বা ৭.০০ পেলেই ভর্তির আবেদন করা যায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট সাড়ে ৩ লাখ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করে। জবি, রাবি, চবি, কুবি, ইবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিপুল শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল।-আমার সংবাদ


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.