এইমাত্র পাওয়া

এ+ বনাম সু-শিক্ষা

সফিউল আলম
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে। জন্মের প্রাথমিক পর্যায়ে বাবা-ময়ের চিন্তা থাকে শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে উঠা নিয়ে। এর জন্য কতই কষ্ট এবং চিন্তাগ্রস্থ থাকেন তারা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যুক্ত হয় আরেক মহা চিন্তা। শিশুকে স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে। কোন স্কুলে ভর্তি করলে তার ভালো হবে? কখন ভর্তি করালে ভালো হয়? ইত্যাদি। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই যুক্ত হয় আরেক চিন্তা। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা নিয়ে। এর জন্য শিশুকে সহ্য করতে হয় নানান প্রকার যন্ত্রণা। যন্ত্রনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর (সকাল, বিকাল এবং রাত) ইত্যাদি। বাড়তে থাকে তার ওপর মানসিক চাপ।

১৯ মে ২০১৭ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর কাছে লেখা একটি শিক্ষার্থীর আবেগময়ী চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিটি ছিলো-

প্রিয় লেখক,

জানেন, আমি কতটা কষ্টের মধ্যে আছি? একটা রাতও আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারছি না, এখন বাজে রাত ২:৩৭, কিন্তু আমার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী, বয়স ১৬ বছর। আগামী ৪ মে আমাদের রেজাল্ট দিবে। আমি জানি যদি আমি ‘এ+’ না পাই তাহলে আমার বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই জন্যই আমি আগে থেকে ঘুমের ১৩টা ট্যাবলেট জোগাড় করে ফেলেছি। আমি একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে। কিন্তু জানেন, তারা কিন্তু কখনও জিজ্ঞেস করেনি, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? তাদের ইচ্ছা আমি ডাক্তার হই। কিন্তু জানেন, আমার সেটাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আবার মেডিকেলে ভর্তি হতে হলে নাইন পয়েন্ট দরকার। কিন্তু আমি যদি ‘এ+’ না পাই এসএসসিতে তাহলে আমার আব্বু বলেছে, সবকিছু আমার শেষ হয়ে যাবে। কারণ ইন্টারমিডিয়েট নাকি অনেক কঠিন। ২০১১ সালে আমি সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু ‘এ+’ পাইনি। আমার আম্মু চিৎকার করে মরা কান্নার মতো করে কেদেঁছেন। আমি কিন্তু তখনও বুঝতাম না ‘এ+’ কী? ‘এ+’ না পাওয়াতে আমার পৃথিবী অন্যরকম হয়ে গেল। সেই ছোট্ট বয়সেই আমি সবার অবহেলার পাত্র হলাম। ফ্যামিলির কেউ আমাকে মূল্যায়ন করত না। জানেন, সেই ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ প্রায় প্রত্যেক দিন আমি দরজা লাগিয়ে কেঁদেছি। আমার আব্বু প্রকাশ্যে সব মানুষের কাছে বলত, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। কিন্তু আমি আসলে সে রকম না। খেলাধুলা, নাচ, গান, অভিনয়, বক্তৃতা আবৃত্তি সব পারি। আমি গান প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তারা কখনও আমার সুনাম করে না। সব সময় বলে আমি নাকি কিছুই পারি না। সব সময় অন্য সব বান্ধবীদের সাথে আমাকে তুলনা করে। আমি ২০১৪ সালে ‘এ+’ পাই জেএসসিতে, কিন্তু আমাকে কিছুই দেয়া হয়নি। কিন্তু আমার ছোট ভাই ক্লাশ এইটে পড়ে, ওকে স্মার্ট ফোন কিনে দেয়া হয়েছে। আপনি কী জানেন, এখন আমার চোখ দিয়ে আঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে? ২০১৪ সালের রেজাল্ট ভালো করার পর সবাই এখন ভালোভাবে দেখে, কিন্তু আমি জানি, যদি আমি ‘এ+’ না পাই এসএসসিতে তাহলে আমার আবার আগের মতো দশা হবে। আপনি কী বুঝতে পারছেন না, আমি কতটা কষ্টের মধ্যে আছি? আমি আমার স্বপ্নের কথা যতবার আব্বু আর আম্মুর কাছে বলেছি ততবার তারা বলেছে, ওটা আমাকে দিয়ে হবে না, কারণ আমি গাধা। আচ্ছা, শুধুমাত্র পড়াশোনা নামক জিনিসটার জন্য ১৬ বছরের একটা কিশোরী কেন এতটা কষ্ট পাচ্ছে, আপনি কী বলতে পারবেন?

ভালো ফলাফল দিতে গিয়ে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় আমাদের সন্তানদের। আর ব্যর্থতায় ঝরে যায় অনেক তাজা প্রাণ। ফলাফল প্রকাশ হলে শুনি, দেখি এবং পড়ি এ+ না পেয়ে এই জেলায়া এতজন নিহত ঐ জেলায় এতজন নিহত। এর শেষ কোথায়? শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৯৭০টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। ২০১৭ সালে ২১৩টি শিশু আত্মহত্যা করে – যে সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ১৪৯। এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম চার মাসে ১১০টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। এটা কেন? সন্তানদের কাছে কি শুধু ফলাফলই প্রত্যাশা আমাদের? আর কিছুই না?

আমরা অভিভাবকরা মনে করি কেবলমাত্র স্কুলে ভর্তি করালেই ভালো ফলাফল করা যায় না। ভালো ফলাফল করতে হলে প্রয়োজন অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। কারোর একার পক্ষে ভালো করানো সম্ভব নয়। বর্তমান সময়ের অভিভাবকগণ ভাবেন স্কুলে ভর্তি করালেই তাদের দায়িত্ব শেষ। এবার সকল দায়িত্ব স্কুল এবং শিক্ষকদের। এই চিন্তাটা সম্পুর্ণ ভুল। মনে করেন, একটি বাড়ি বানাতে ৪টি খুুিট লাগবে। একটি খুটি না দিয়ে কী বাড়ি তৈরি করা সম্ভব? উত্তর নিশ্চয়ই না। তাই একজন শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশ ঘটাতে হলে অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।

একজন মা-বাবা যখন তাদের সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন তখন তাদের সন্তানের জন্যে কিছু দায়িত্ব থাকে। সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি হচ্ছে যে, এই সন্তানকে একটা আনন্দময় শৈশব দিতে হয়। কীভাবে কীভাবে জানি এই বিষয়টা অনেক মা-বাবা ভুলে গেছেন। তাদের সব হিসেব গোলমাল হয়ে গেছে। তারা কীভাবে কীভাবে জানি মনে করছেন তাদের সন্তানদের জন্যে একটি মাত্র দায়িত্ব, সেটি হচ্ছে পরীক্ষায় এ+ পাওয়া! সেই এ+’র জন্যে তাদের শিশুদের পুরো শৈশব ধ্বংস করে ফেলতে তাদের কোনো দ্বিধা নেই, কোনো সংকোচ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সানিয়া লুথার বলেন, ‘সন্তানের আগ্রহের তুলনায় তার অর্জনকে যখন অভিভাবকরা বেশি প্রধান্য দেন, তখন তারা সন্তানের মানসিক চাপ এবং শারীরিক অসুস্থতার বীজ বপন করেন, যার পরিণাম চোখে পড়তে পারে শিশু শ্রেণি থেকেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানের শারীরিক ও মানিসক সুস্থতা এবং শিক্ষাজীবনের সাফল্য নিশ্চিত করতে ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে পাঠ্যবই ও পাঠক্রম বহির্ভুত কর্মকান্ড ছাড়াও উদারতা ও অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে।’

পাস করা ও জ্ঞানার্জন দুটোই আলাদা বিষয়। অনেক শিক্ষার্থী মনস্তাত্তি্বক বিকাশ ও মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে পারেনি অথচ সে কয়েকটা সার্টিফিকেটের অধিকারী। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মোটামুটি ভালো ফলাফল করলেও তাদের অভিভাবক তাদের আরো ভালো রেজাল্টের জন্য ছেলেমেয়েদের ওপর অহেতুক অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে কিন্তু এটা দেখছে না যে, তার ছেলেমেয়ে কতটুকু শিখতে পেরেছে। যেটুকু রেজাল্ট অর্জন করেছে তা কি সত্যকার শিক্ষালাভের মাধ্যমে অর্জন করেছে? একজন ছোট্ট শিশুকে আজ শুধু পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের আশায় বা সার্টিফিকেটের আশায় কয়েকজন প্রাইভেট মাস্টারের দ্বারে যায়। অনেক শিশু মা-বাবার এমন চাপে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। কাঁধে বইয়ের অসহনীয় বোঝা নিয়ে সারা দিন পড়াশোনায় টিউশন মাস্টারের বাড়িতে বাড়িতে ছোটাছুটি করছে। অথচ এই কোমলমতি শিশুদের নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। আচার-আচরণের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। শুধু পরীক্ষায় পাসের উপযোগী প্রশ্নগুলো না বুঝিয়ে শুধু মুখস্থবিদ্যায় উৎসাহী করা হয় যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কৌশল মাত্র। যে ছেলেমেয়ে সারা বছর পড়াশোনা করে না তারাও পরীক্ষার কয়েক দিন আগে পড়লে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে কিন্তু সঠিক শিক্ষাগ্রহণ বা জ্ঞান অর্জন থেকে তারা অনেক দূরে থাকবে। পরীক্ষায় সন্তান ভালো না করলে তাদেরকে চাপ বা বকুনি খেতে হচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সকল দায়িত্বটাই কী আপনার সন্তানের? আপনার কি কোনো দায়িত্ব নেই? সকল দায়িত্বটা আপনি স্কুল, প্রাইভেট টিউটর এবং সন্তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন?

ফলাফল ভালো করার জন্য আপননি নিজ কোন কাজটি করেছেন? অভিভাবকরা সব সময় শিশুদের পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য বল প্রয়োগ এবং ধমক দিয়ে থাকেন। বেশি পড়লে পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হবে। না, সব ক্ষেত্রে এমন ধারণা ভুলও হতে পারে। ভালো রেজাল্টের জন্মগত প্রতিভা ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই নিয়ে পড়ে থাকা নয়। নিয়মিত ভালো ফলাফল করে, এমন শিক্ষার্থীদের আসলে কিছু অভ্যাস থাকে যা তাদের ভালো ফল করতে সাহায্য করে।

ক্লাসে উপস্থিতি: কোনো শিশু যদি ভালো ফল করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হবে। শিক্ষক কী বুঝাচ্ছেন তা বুঝতে না পারলে তা পুনরায় জিজ্ঞেস করতে হবে। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার সময় শিশুর ক্লাসের পড়া নিয়ে আলোচনা করেছেন? আলোচনা করাটা আপনার দায়িত্ব।

হোমওয়ার্ক: ক্লাস শেষে আপনার সন্তান বাড়ি ফিরলো। স্কুল থেকে সে পরের দিনের পড়া নিয়ে আসছে। কেননা স্কুলে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুদের একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস এবং পাঠপরিকল্পনা ধরে পড়ানো হয় এবং সেই পড়া অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়া হয়। তাই প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পর শিশুকে হোমওয়ার্ক করাতে হবে। দিনের হোমওয়ার্ক দিনে শেষ করলে পড়ার চাপও কমে আর পরীক্ষায় ভালো ফলও হয়। এটা নিয়মিত করেন কী?

পড়াশোনাকে প্রাধান্য দেয়া: পড়াশোনার সময়ে শুধুই পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া উচিত। বই খোলার পর টিভি দেখা, খেলা করা এমনকি টুকিটাকি খাওয়ার দিকেও মনোযোগ না দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। দেখা যায়, আপনার সন্তান পড়ছে আপনি বসে বসে টিভি দেখছেন আর হাসছেন। তাহলে আপনার সন্তান কি করবে?

একসঙ্গে পড়া: শ্রেণিকক্ষে তার সহপাঠিরা রয়েছে। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের সহপাঠীদের সঙ্গে পড়াশোনা করলে ফলাফল ভালো হয়। একেকজন একেকভাবে পড়াশোনা করে, কেউ একটি বিষয় অন্যদের থেকে ভালো বোঝে, কারও ক্লাস নোটস অন্যদের তুলনায় ভালো হয়।

বিষয় ভিত্তিক নোট খাতা তৈরি করতে উৎসাহ প্রদান এবং সময়ে সময়ে পর্যক্ষণ করা: স্কুলের পাশাপাশি আপনিও তার বিষয় ভিত্তিক নোট খাতাগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে তদারকি করুন। করেছেন কখনো?

বিদ্যালয়ের কর্মকা-ে অংশগ্রহণ ও পরামর্শ প্রদান: অভিভাবক বিদ্যালয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ উন্নয়নকল্পে তাঁরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। কথাটি কখনো উপলদ্ধি করেছেন কিনা?

লেখার অভ্যাস: যে বিষয়ে শিশুকে পড়াচ্ছেন সেই বিষয়টি লেখার অভ্যাসও করতে হবে। কারণ পড়ার পরে লেখলে পড়া সহজে রপ্ত করা যায় আর কঠিন বানানও সহজ হয়ে যায়। তাই ফল ভালো হয়।

মাঝে মাঝে আপনি তার পরীক্ষা নিন: স্কুলে পরীক্ষা নেয়া হয়। আপনিও তার পরীক্ষক হয়ে জান। একটি নির্দিষ্ট অধ্যায় শেষ হলেই আপনি তাকে ঐ অধ্যায়ের দক্ষতা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নিতে পারেন। এতে পুরো পড়া ভালোভালো রপ্ত করতে পারবে। কখনো করেছেন এই কাজটা?

সুন্দর করে ডায়েরি লেখা: বিদ্যালয়ের পাশাপাশি আপনি পড়ার জন্য পাঠ্যবই পড়া দরকারি, ঠিকই। কিন্তু ক্লাসে মনোযোগ দেয়াটাও জরুরি। ক্লাসে যা পড়ানো হয়, যেটায় জোর দেয়া হয় সাধারণত সেটাই পরীক্ষায় আসে। তাই শিশুকে ক্লাস ডায়েরি লেখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া শেখাতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে ডায়েরির গুরুত্ব সম্পর্কে। এখানে আপনি তাকে কতটা সহযোগিতা করছেন?

বাচ্চার কথা মনোযোগ সহকারে শোনা: বাচ্চার কথা মনোযোগ সহকারে শোনা, তার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা, এসব তাকে গুরত্বপূর্ণ ভাবতে সাহায্য করে। ছোট বড় যেকোন সমস্যায় সে যেন আপনার কাছেই ছুটে আসে, সেইটুকু নির্ভরতার জায়গাটা তৈরি করুন। চেষ্টা করছেন কখেনো?

অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা না করাঃ মহান আল্লাহ একেকজনকে এক এক প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মেধা আল্লাহর দান। আমরা মনে হয় তা মানতে রাজি নই। কেননা আমরা সন্তানদের আরেক জনের সাথে উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের মানতে হবে প্রত্যেকটা বাচ্চাই আলাদা। তাদের মেধা, সৃজনজনশীলতা ও গুণাবলীর প্রকাশভঙ্গি আলাদা। সুতরাং কোন বাচ্চাকে অন্য কোন বাচ্চার সাথে তুলনা করা বোকামি। এতে তাদের মনে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। ভালো অভিভাবকত্বে মূলত বাচ্চাকে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সফলতার পথে হাটতে শেখানো হয়। আপনি কি তা করছেন?

স্বাবলম্বী হতে শেখান: আপনি আপনার সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখান। ছোটখাটো কাজ যেমন, তার বই, খেলনা, কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি করতে দিন। আপনি বা পরিবারের অন্যের কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়েই একটি শিশু দায়িত্ববান হয়ে উঠে।

আপনার সন্তানের ভালো ফলাফল করার জন্য শুধুমাত্র তার একার দায় নয়। আপনারও বেশ কিছু দায়িত্ব ও কতর্ব্য রয়েছে। যখনি আপনি সেই কতর্ব্যগুলো ভালোভাবে পালন করতে পারবেন; তখনি ভালো ফলাফল আশা করতে পারবেন। শুধুমাত্র তার কাছে পরীক্ষার ফলাফলই আশা করেবন না, তাকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বড়দের সম্মান, আচার-আচরণ, অপরাধ বোধ, চলাফেরা এবং ইত্যাদি বিষয়ে ভালো ফলাফল তৈরি হচ্ছে কিনা সেটাও আপনার আশা করা উচিৎ। স্কুলে পড়ালেখা বা ভালো ফলাফল অর্জন করলেই সে ভালো মানুষ হবে না। ভালো মানুষ হতে তাকে ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়া চাই। মনুষ্যত্ববোধ অর্জনের জন্য চাই শিক্ষা । ভালো ফলাফল বা এ+ পাওয়ার জন্য নয়।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.