অষ্টম শ্রেণি : গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

অষ্টম শ্রেণি : গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

মো: আমিনুল ইসলাম

প্রশ্ন : ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে একজন কর্মী অনেক বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপুল বিকাশের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানা ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। এর বিকাশের শুরুর দিকে ধারণা করা হতো স্বয়ংক্রিয়করণ এবং প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে বিশ্বব্যাপী কাজের পরিমাণ কমে যাবে এবং বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে কিছু কিছু সনাতনী কাজ বিলুপ্ত হয়েছে বা বেশ কিছু কাজের ধারা পরিবর্তন হয়েছে বটে, তবে অসংখ্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই পরিবর্তিত ও নতুন কাজের ক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার জন্য কর্মীরা ক্রমাগত নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করছে, কাজ শিখছে ও দক্ষ হচ্ছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই কম কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারে।

বাঙালি শিক্ষাবিদ ও বর্তমান আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক ড. ইকবাল কাদিরের মতে, প্রযুক্তিতে জনগণের সংযুক্তি বাড়লে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। ফলে তৈরি হয় নতুন নতুন কর্মসংস্থান। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কর্মীরা দক্ষ হয়ে ওঠার
কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো :
১. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য কর্মীরা তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক।
২. কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণগুলোতে অংশগ্রহণ করছে, কাজ শিখছে। আর এভাবে নিজেদের ক্রমাগত দক্ষ করে তুলছে।
৩. কর্মীরা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ও রোবট পরিচালনার কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে করছে, যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো সহজেই নিখুঁতভাবে করতে পারছে।

৪. কম্পিউটারের সাহায্যে অনেক কাজই এখন সহজে করে ফেলা যায়, যা বিশেষ দক্ষতা না থাকলে আগে করা যেত না। যেমন ফটোগ্রাফি বা ভিডিও এডিটিং। ফলে কম সময়ে কর্মীরা বেশি কাজ করতে পারছে।

৫. তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে অনেকেই এখন ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন ভার্চুয়াল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অনেকে নিজেদের কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিচ্ছে, বেকারত্ব দূর করছে ও স্বাবলম্বী হচ্ছে।

প্রশ্ন : দুর্নীতি নিরসনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পৃথিবী থেকে দুর্নীতি কমানোর জন্য সবাই নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে।
১। তথ্যপ্রযুক্তি সব তথ্য সবার সামনে উপস্থিত করতে পারছে। কাজেই কোথাও কোনো দুর্নীতি করা হলে সেটি সবার সামনে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে; ফলে দুর্নীতি হ্রাস পাচ্ছে।

২। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি করে আর্থিক লেনদেন করলে সেটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাণ্ডারে চলে আসছে এবং স্বচ্ছতার কারণে সেটি প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। তথ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া করার জন্য প্রতিষ্ঠানের পুরো পদ্ধতি তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় থাকায় এ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।

৩। যেসব কাজ করতে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়, সেগুলো সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয়। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার জন্য লিখিত আবেদন জানায় এবং কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে কাজটি করার জন্য কাউকে বেছে নেয়। এতে টেন্ডারসংক্রান্ত তথ্য, টেন্ডার আহ্বান, টেন্ডারের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণসহ সব কাজ ওয়েবের মাধ্যমে করা হয়, কোনো মানুষকে সরাসরি মুখোমুখি হতে হয় না। ফলে দুর্নীতি অনেক কমে গেছে।

৪। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের কারণে পণ্য উৎপাদনকারীরা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে।
একে ই-কমার্স বলে। ফলে দালাল শ্রেণির মানুষ উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রয় করা কিংবা পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এভাবে দুর্নীতি কমে যাচ্ছে।

সহকারী শিক্ষক, হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading