এইমাত্র পাওয়া

দিনের পর দিন ক্লাসে অনুপস্থিত তবুও বেতন তুলছেন ঢাবি’র অর্ধশত শিক্ষক

ঢাকাঃ ক্লাস নেন না তারা। দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত করছেন একদল শিক্ষক। কিন্তু মাস শেষে সরকারি কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা বেতন-ভাতা সবই হিসাব কষে তুলে নিচ্ছেন তারা। এমন অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপরীত অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি একদল শিক্ষক। তীব্র জনরোষের মুখে নিজ নিজ বিভাগে পাঠদান থেকে দূরে আছেন তারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ক্লাস পরীক্ষাসহ সকল কাজ থেকে দূরে থাকলেও প্রতিমাসে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন এসব শিক্ষক।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও অনুষদগুলোর মধ্যে আইন বিভাগের ৪ জন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ৬ জন, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে ২ জন, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে ২ জন, ইতিহাস বিভাগে ২ জন, আরবি বিভাগে ৩ জন। এ ছাড়াও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে অন্তত ১২ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ১২ জন, ৪টি ইনস্টিটিউটে ৩ জনসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন না।

এদের মধ্যে আছেন নীলদল নেতা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান লিটু, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ, ড. জামিল আহমেদ চৌধুরী, ড. আকসাদুল আলম, ড. এম আমজাদ আলী, ড. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আ.ক.ম জামাল উদ্দীনসহ আরও অনেকেই। এ ছাড়াও পুরোপুরি লোকচক্ষুর আড়ালে আছেন সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ.স.ম মাকসুদ কামাল, সাবেক প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, সাবেক প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৪ দিন আগে গত বছরের ১লা আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন জানান এসব শিক্ষকরা। এ সময়ে তারা বলেছিলেন, আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে সহিংস হয়ে ওঠে, যা গভীর উদ্বেগের। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের কাঁধে ভর করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রতিনিয়ত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত করার ঘৃণিত চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানাই।

তৎকালীন সরকারের সঙ্গে সুুর মিলিয়ে আওয়ামীপন্থি এসব সুবিধাভোগী শিক্ষকরা বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ৩রা আগস্ট মানববন্ধনও করেন এসব শিক্ষক। সেই মানববন্ধন থেকেও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন তারা। ফলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা এ সকল শিক্ষককে নিজ নিজ বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বয়কট করার ঘোষণা দেন। গত আট মাস যাবৎ এ সকল শিক্ষক ক্লাস, পরীক্ষা, থিসিসসহ সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। কেউ কেউ বিভাগে আসলেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ৮ মাসে তারা অনেকেই একটি ক্লাসও নেননি। কেউ কেউ ক্লাসে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থেকেও পাচ্ছেন লাখ লাখ টাকা বেতন-ভাতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান রাফি বলেন, আমার বিভাগের তিনজনকে বয়কট করলেও দেখা যায় তারা একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে আসছেন। এসব দেখাটা কষ্টকর শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ২ দিন আগেও তারা গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ প্রশাসনের দিকে তাকান যেন তাদের কিছুই করার নাই। এই দায় জুলাই পরবর্তী রক্তের উপর দাঁড়ানো এই প্রশাসন কীভাবে এড়াবে?

এ বিষয়ে ঢাবি’র ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, এটা আসলে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসনের একটা পদক্ষেপ মাত্র। কিন্তু সরকারি যে নিয়ম সে নিয়ম অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা প্রমাণ না হওয়া অবধি সরকার তার স্যালারি বেনিফিট বন্ধ করে না। যেটা আসলে হওয়া দরকার ছিল যে তাদের অপরাধকে প্রমাণ করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। এখন যেটা হচ্ছে তাতে না তাদেরকে অপরাধী বলা যাচ্ছে না তাদের কাছ থেকে কোনো সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের টাকাটা তো ঠিকই খরচ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিটি কেস বাই কেস সমাধান করা।

এ বিষয়ে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা জানান, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের বিভাগ ও অনুষদভিত্তিক এসবের জন্য কমিটিও হয়েছে। আমরা সবকিছুর মতোই এই বিষয়টাতেও কিছুটা সময় নিয়ে এগোচ্ছি। যেহেতু শিক্ষকদের বিষয়টি স্পর্শকাতর একটি বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদলের নেতা ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান চান বলেন, সংশ্লিষ্টদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন খুলে দেখা উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার ১৯৭৮-এ বলা আছে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর প্রমাণ হওয়ার আগ অবধি কোনোভাবেই শাস্তি প্রদান করা যাবে না তদন্ত থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটই করবে। কিন্তু এখন আমরা কি দেখছি আমরা দেখছি আমাদের ক্লাসে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এটা ভয়াবহ জুলুম আল্লাহর জমিনে এ জুলুমের বিচার হবে। তিনি বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষকদের এভাবে লাঞ্ছিত করেছে তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে বেইজ্জতি করবেন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০৫/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading