ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার সেই গায়েবি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার সকালে গায়েবি সেই মাদ্রাসটিতে যায় দুদকের একটি দল।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, ধান খেতের মধ্যে সামান্য একটি টিনের ঘরকেই দেখানো হচ্ছে ‘নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা’ হিসেবে। কোনো নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম নেই, নেই শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত প্রমাণও।
অভিযানের পর দুদক ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী বলেন, ‘বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অবকাঠামো নেই। অথচ, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা হিসেবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন এবং এমপিওভুক্তির জন্য তদবির চলছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘দুদকের উপস্থিতির খবর পেয়েই প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি কিন্ডারগার্টেন থেকে শিশুদের এনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। চকোলেটের লোভ দেখিয়ে এদের হাজির করা হয়েছিল বলেও প্রমাণ মেলে।’
স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘গায়েবি মাদ্রাসার ৫০০ মিটার দূরেই নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। কিন্তু আমাদের নাম ব্যবহার করে ভুঁইফোঁড় আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
মাদ্রাসাটির সহকারী শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, ‘চক্রটি পুরো বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে করেছে। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারি সুবিধা হাতিয়ে নিতেই এ অপচেষ্টা।’ শিক্ষিকা কৃষ্ণ রানী বইস্য বলেন, ‘আমাদের আসল মাদ্রাসায়ই শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। অথচ, একই নামে আরেকটি মাদ্রাসা কাগজে কলমে চালু দেখিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে একটি চক্র।’
এদিকে প্রশাসনের তদন্তেও গায়েবি মাদ্রাসার আমলনামা উঠে এসেছে। গত ৬ এপ্রিল সরেজমিন গায়েবি মাদ্রাসটিতে যান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার। তার প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ‘নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা’ নামে বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সেখানে কোনো শিক্ষাকার্যক্রমও পরিচালিত হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দাবি করা ব্যক্তি শাহিনুর আলমও কোনো বৈধ কাগজপত্র, শিক্ষক নিয়োগের প্রমাণ কিংবা শ্রেণি কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ গায়েবি মাদ্রাসার পেছনে রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক তালিকায় উঠে এসেছে পূর্ব বেগুনবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনের আত্মীয়স্বজনদের নাম। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন তার বড় ভাই আমিনুল হক সরদার, যিনি বেগুনবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন মহলে প্রভাব খাটাচ্ছেন আমিনুল হক সরদার। বিষয়টি তদন্ত হওয়া জরুরি।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.