নিজস্ব প্রতিবেদক :
এমপিওভুক্তির নীতিমালার শর্তের বৈতরণী পার হতে পারছে না অন্তত অর্ধশতাধিক সংসদীয় আসনের নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিজ নির্বাচনী এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান জানতে সংসদ সদস্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী শর্তপূরণ করা প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে এমপিদের ডিও লেটার কোনো কাজে আসবে না। এমপিওভুক্তির জন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চার ধাপে ১০০ নম্বরের গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হতে হবে।
এ শর্তে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই অনগ্রসর এলাকার। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য নীতিমালার ২২ অনুচ্ছেদ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছে বাছাই কমিটি। একই সঙ্গে তারা কোনো প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া বা না দেওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তৈরি করছেন। এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারির পর যাতে কোনো মামলা-মোকদ্দমায় না জড়াতে হয়, সেদিকে সতর্ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের দাবি অনুযায়ী তাদের নির্বাচনী এলাকার পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই।
শুধু যেসব প্রতিষ্ঠান নীতিমালার ১৪নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করবে, সেগুলো এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে। তবে বিদ্যমান যাচাই-বাছাইয়ে কোনো কোনো সংসদীয় এলাকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো সংসদীয় আসনে একটিও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। একটিও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি এমন অন্তত অর্ধশতাধিক সংসদীয় আসন রয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই অনগ্রসর জনপদের।
সম্প্রতি এক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটিকে এমপিও দেওয়া না দেওয়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যৌক্তিক ব্যাখ্যা তৈরির নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাওড়, চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিষ্ঠান হলে সর্বোচ্চ মানেরটিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলেছেন। এমপিওভুক্তির গেজেট প্রকাশ হলে এমপিও না পেলে সংক্ষুব্ধ কোনো প্রতিষ্ঠান আদালতে মামলা করলে যাতে যৌক্তির ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, সেজন্য দায়িত্বশীলদের সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এমপিওভুক্তির নীতিমালার ১৪নং অনুচ্ছেদে এমপিওভুক্ত হতে চার ধাপে স্কোরিং নম্বরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মোট নম্বর থাকবে ১০০।
এর বিভাজন হচ্ছে-প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি ২৫ নম্বর। প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে ২৫ নম্বর। শিক্ষার্থী সংখ্যায় থাকবে ২৫ নম্বর। কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর এবং এর পরবর্তী ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য পাবে ৫ নম্বর। পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ২৫ নম্বর। কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, কাম্য সংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর। উত্তীর্ণের পরিসংখ্যানেও ২৫ নম্বর। কাম্য হার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৫ নম্বর। এ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্যই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকা হিসেবে এমপিওভুক্তির প্রতিষ্ঠান বিভাজন হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, এমপিওভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী শতভাগ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। কোথাও যদি নীতিমালার ২২ অনুচ্ছেদ প্রয়োজন হয়, সেটাও দেখা হবে। ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল।
এ ক্ষেত্রে অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাগে অসুবিধাজনক পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে। সংসদ সদস্যদের ডিও লেটার প্রথা থাকবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নীতিমালার গ্রেডিং নম্বরে উত্তীর্ণ না হলে ডিও লেটার কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দুটি কমিটি করেছে। এগুলো হলো-আবেদন বাছাই কমিটি এবং অনলাইন ব্যবস্থাপনা কমিটি। এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে এ দুটি কমিটি কাজ করছে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.