নিউজ ডেস্ক।। দেশে মেডিক্যাল শিক্ষায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলো ব্যাপক অবদান রাখছে। কোনো কোনো সরকারি মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুনাম কুড়ালেও বেসরকারি খাতের মেডিক্যাল কলেজগুলোর সুনামও কম নয়। শুধু পড়ালেখাই নয়, চিকিৎসা এবং মানবসেবার ক্ষেত্রেও এসব প্রতিষ্ঠানের সুনাম কম নয়।
বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষায় এমনই একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। রাজধানীর উত্তরাসংলগ্ন টঙ্গীতে সবুজ ছায়াঘেরা নান্দনিক পরিবেশে এ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এর ক্যাম্পাসে একটি খননকৃত লেক রয়েছে। হ্রদের চারপাশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক চারটি হোস্টেল, ইন্টার্ন ডাক্তারদের পৃথক হোস্টেল রয়েছে। এছাড়া নার্সিং কলেজ ভবন এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হোস্টেল রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যে সময় এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এ এলাকায় তেমন রাস্তাঘাট ছিল না। বর্ষাকালে নৌকা এবং গ্রীষ্মকালে হেঁটে চলাফেরা করতে হতো। কয়েক বছরে রাস্তাঘাটসহ যাতায়াতের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় এ এলাকায় গার্মেন্টসসহ নানা ধরনের মিল কারখানা, মার্কেটসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই এলাকার বাসিন্দা ও শ্রমিকরা স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন বলে তারা জানান। এলাকাবাসীর মতে, ১০ লক্ষাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে এই হাসপাতালটি আশীর্বাদস্বরূপ।
ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল লেখাপড়ার দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে এই কলেজের পাশের হার ৮৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় কলেজের ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। এই মেডিক্যালে শুধু দেশের নয়, বিদেশি অনেক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। অনেকে ডাক্তার হয়ে দেশে বিদেশে নামি দামি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছে।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮২৩ জন। এর মধ্যে ৫১০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং ৩১৩ জন বিদেশি।
দ্বিতীয় ফাইনাল প্রুফ এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেছে। এই ফলাফলে টঙ্গীস্থ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের পাশের হার ৯৬ শতাংশ। ৭ জন শিক্ষার্থী অনার্স মার্ক পেয়েছে। প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজগুলোর মধ্যে এই কলেজের ফলাফল শীর্ষস্থানে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৩৯টি সরকারি ও বেসরকারি ৬৯টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে।
বেসরকারি এ হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আধুনিক মানের সুসজ্জিত এ প্রতিষ্ঠানের দুইটি ভবন। এর মধ্যে একটি মেডিক্যাল কলেজ ভবন ও অন্যটি হাসপাতাল ভবন। ১০০ থেকে ২০০ ছাত্রছাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক পাঁচটি লেকচার গ্যালারি রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে ছয়টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩৫০ আসনবিশিষ্ট লাইব্রেরি রয়েছে। লাইব্রেরিতে রয়েছে সর্বশেষ সংস্করণের ৩ হাজার ৭৫৪টি বই। ৫ হাজারের বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল। এছাড়া রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলি। সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত স্বনামধন্য চিকিৎসকরাও এই মেডিক্যাল কলেজে যোগদান করেছেন। মোট ১২৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। সাত জন শিক্ষার্থীর অনুপাতে একজন শিক্ষক রয়েছেন।
উদ্যোক্তারা জানান, ৬৫০ বেডের ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা, অপারেশনের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য আসে। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে নানা অপারেশনও করা হচ্ছে। একই অপারেশন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রাজধানীর অভিজাত এলাকার হাসপাতালে দেড় লাখ থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা নিয়ে থাকেন।
এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির সঙ্গে সংযুক্ত আছে একটি আধুনিক মোবাইল ক্লিনিক। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাসের মধ্যে পরিচালিত এ ক্লিনিকে নানা যন্ত্রপাতিসহ ওষুধসামগ্রী রয়েছে। এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সরা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করে থাকেন।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মবিন খান বলেন, ‘আমি দুর্গম এলাকায় হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করি, যেন অসহায় ও দরিদ্র মানুষেরা হাতের কাছে চিকিৎসাসেবা পায়। হাসপাতালটি এখন তাদের কাছে চিকিৎসাসেবার আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাণিজ্য নয়, সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করছি আমি। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-চিকিৎসা শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায় পৌঁছেছে’।
শেয়ার করুন এই পোস্ট
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on Pinterest (Opens in new window) Pinterest
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.