ভোলাঃ গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিদ্যালয়ে আসছেন না। এর মধ্যে অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু নিয়মিত নিচ্ছেন বেতন-ভাতা। বলছিলাম ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা থানার চর আইচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রাবিয়া বেগমের কথা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিদ্যালয়ে আসছেন না রাবিয়া বেগম। তার স্বামী আবদুল মান্নান উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি। তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। রাবিয়া বেগম আওয়ামী লীগ নেতাদের বলয়ে থেকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি করেছেন রাজনীতিও। স্বামী-স্ত্রী মিলে ওই প্রভাব খাটিয়ে নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। লুটপাট করেছেন বিদ্যালয়ের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা। সহকারী শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানালে ‘প্রভাবশালী’ স্বামীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে তিনজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া বেগম, মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন জানায়, প্রায় ৬ মাসের বেশি স্কুলে আসেন না প্রধান শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষক নাজমুল হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক রাবিয়া বেগমসহ ৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি (রাবিয়া বেগম) এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদ্যালয় ছাড়েন। এরপর মাঝে মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে অফিসিয়াল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তিনি কোথায় আছেন এবং কবে নাগাদ স্কুলে ফিরবেন কিছু বলছেন না। তবে নাজমুল হোসেন শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শিক্ষক হাজিরা খাতা দেখান। অসুস্থতাজনিত ছুটির কাগজপত্রসহ অন্যান্য মাসের হাজিরা খাতা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা আবদুল হাকিম মোল্লা বলেন, প্রধান শিক্ষিকা রাবিয়ার স্বামী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বহু বছর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। স্ত্রী প্রধান শিক্ষক আর স্বামী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় লুটপাট করেছেন বিদ্যালয়ের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা। বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে রাবিয়া বেগম বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় ছুটিতে আছি, তাই বিদ্যালয়ে নেই।’ তবে কবে থেকে কতদিনের ছুটিতে আছেন এমন প্রশ্নের কোনো জাবাব তিনি দিতে রাজি হননি। পরে ‘অসুস্থ কথা বলেতে পারব না’ বলে ফোন রেখে দেন।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রথমে রাবিয়া বেগম অসুস্থজনিত কারণে এক মাসের ছুটি নেন। পরে পরিদর্শনে গেলে জানতে পারি, তিনি কয়েক মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহ. তাশেম উদ্দিন বলেন, রাবিয়া বেগমকে অনুপস্থিতির কারণ ব্যখ্যা করতে নোটিস দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসানা শারমিন মিথি বলেন, বিষয়টি জেনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/০৩/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.