এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষার্থীরা ৮০ নম্বর না পেলে টিসি, অভিভাবকদের প্রতিবাদ

ঢাকাঃ অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ৮০ নম্বর পেতে হবে। কেউ তা না পেলে তাকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হবে। তাতে কোনো অভিভাবক ও শিক্ষার্থী যেন আপত্তি তুলতে না পারেন, সেজন্য বছরের শুরুতে অঙ্গীকারনামায় সই করতে অভিভাবকদের বাধ্য করছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

একই সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীদের পুরো বছরের বেতন-ফি একসঙ্গে বছরের শুরুর মাসে পরিশোধ করতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ নিতে পারবে আর কে পারবে না, তাও ঠিক করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সম্প্রতি কয়েক দফা মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি করেছেন অভিভাবকরা। তবে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা অভিভাবকদের দাবি মানতে নারাজ।

শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও কলেজ সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের শেষদিকে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন কারিকুলাম বাতিল করে পুরোনো কারিকুলামে ফিরে যায়। এতে মাত্র এক থেকে দেড়মাস পড়ালেখা করে তারা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী গণিত, ইংরেজিসহ কিছু বিষয়ে খারাপ ফল করেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিন বিষয়ে ফেল করাদেরও পরবর্তী ক্লাসে তুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তা অগ্রাহ্য করে ফেল করা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে পরের ক্লাসে না তুলতে তোড়জোড় শুরু করে কর্তৃপক্ষ। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবির মুখে সবাইকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়।

অভিভাবকদের আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের চাপ ভালোভাবে নেয়নি রাজউক কর্তৃপক্ষ। ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো—পুরো বছরের বেতন-ফি ১৯ জানুয়ারির মধ্যে একসঙ্গে পরিশোধ এবং ৮০ নম্বর না পেলে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হবে মর্মে অঙ্গীকারনামা। তাছাড়া দু-একটি বিষয়ে কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগ নিতে দেওয়াও হচ্ছে না।

নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর মা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এবার হঠাৎ কারিকুলাম চেঞ্জ হয়েছে। নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা ছিল না। পুরোনো কারিকুলামে ফেরায় পরীক্ষা হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ফলে আশানুরূপ ফল করেনি। সরকার নির্দেশ দিলেও তা মানতে নারাজ রাজউক কলেজ। তারা পদে পদে আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে। পুরো বছরের বেতন চাওয়া হচ্ছে। অঙ্গীকারনামা নেওয়া হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘সব বিষয়ে ৮৫-৯০ নম্বর পেয়েছে। একটি বিষয়ে আমার ছেলে খারাপ করেছে। এখন তাকে বিজ্ঞান বিভাগ নিতে দেওয়া হবে না। কারণ কী? কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সে খারাপ করেছে। আমি আমার ছেলেকে কোন বিষয়ে পড়াবো সেটা আমার এবং আমার ছেলের সিদ্ধান্ত। কর্তৃপক্ষ তো আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না।’

পদক্ষেপগুলো নতুন নয়, আগে থেকে এ নিয়ম চলে আসছে বলে দাবি করেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এনামুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘রাজউকে ভর্তি হতে চাওয়া আগ্রহী শিক্ষার্থী অসংখ্য। আমরা খুব কম শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারি। যারা লটারির মাধ্যমে এখানে এসেও খারাপ ফল করছে, তাদের তো আমরা বছরের পর বছর রাখতে পারি না। অভিভাবকরা যেন তাদের সন্তানদের ভালো করতে গুরুত্ব দেয়, সেজন্য অঙ্গীকারনামার ব্যবস্থা।’

পুরো বছরের বেতন-ফি পরিশোধে বাধ্য করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তো সব শিক্ষার্থীর জন্য নয়। যারা খারাপ করছে, তাদের জন্য। এসব শিক্ষার্থীর অনেকে গোপনে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়। তখন তাদের বেতন-ফি বকেয়া থেকে যায়। এজন্য আমরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের পুরো বছরের ফি নিয়ে রাখছি।’

আগ্রহীদের বিজ্ঞান বিষয় নিতে না দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের ফলাফল সবসময় ভালো। এবারও শতাধিক শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ করে নিয়েছে। এটা তো এমনি এমনি হয়নি। যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখায় ভালো করছে না, তাদের সায়েন্স নিতে দিলে তো ফল বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.