শিক্ষার্থীদের দ্রুত পাঠে দক্ষতা বাড়াতে বিদ্যালয়ে পত্রিকা পড়ার উদ্যোগ

মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিছিয়ে পড়া ও অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতে দ্রুত পঠনপাঠনে দক্ষতা বাড়াতে পত্রিকা পড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পত্রিকা পাঠের সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে বানানো হয়েছে একটি পত্রিকা স্ট্যান্ড। বৃহস্পতিবার উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের গিয়াসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা মিলে সেই পত্রিকা স্ট্যান্ড উদ্বোধন করেছেন। এ স্ট্যান্ডে থাকবে শিশুতোষসহ অন্যান্য ম্যাগাজিন ও বই।

গিয়াসনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্রুত পঠনপাঠনে একধরনের অনভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। দ্রুত ও সঠিক উচ্চারণে পাঠের চর্চা তেমন একটা নেই। এই শিক্ষার্থীদের অনেকে উচ্চারণ করে পড়তে গেলেই কোথাও না কোথাও আটকে যাচ্ছে। দ্রুতগতিতে অনেকেই পড়তে পারছে না। একইভাবে পাঠ্যসূচির বাইরে অন্য ধরনের বই পড়ারও অভ্যাস গড়ে উঠছে না। অন্য বই পড়তে কারও আগ্রহ নেই। বই, পত্রপত্রিকা পাঠের পরিবেশ ও ধারাবাহিক চর্চা না থাকায় এই অনীহা, অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেটা দূর করতেই এ উদ্যোগ।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ে প্রায় দিনই শিক্ষকেরা বাংলা, ইংরেজি কোনো না কোনো পত্রিকা নিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে টেবিলের ওপর রাখছেন; কিন্তু তারা তেমন একটা পত্রিকা পড়ছে না। কেউ পত্রিকা নেড়েচেড়ে দেখে রেখে দেয়। কিছু আছে নিজেদের মধ্যে টানাটানি করতে গিয়ে পত্রিকা ছিঁড়ে ফেলছে। কার্যত আর পত্রিকা পড়া হয় না শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় পত্রিকা পড়ার একটি পরিবেশ তৈরি, পত্রিকা যথাযথ সংরক্ষণ করা, এসব বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিনা বেগম পত্রিকা স্ট্যান্ড বানানোর উদ্যোগ নেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও সমর্থনে একজন কাঠমিস্ত্রির মাধ্যমে তৈরি করেছেন পত্রিকা স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ডটি বিদ্যালয়ের একটি সুবিধাজনক স্থানে রেখে তাতে কোনো না কোনো বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা রাখা হবে। দৈনিক ছাড়াও মাসিক, ত্রৈমাসিকসহ শিশুতোষ বিভিন্ন পত্রিকা ওই স্ট্যান্ডে রাখা হবে। এর সঙ্গে থাকবে শিশুদের পাঠ-উপযোগী বিভিন্ন ধরনের বইও। মূলত কোনো না কোনোভাবে শিশুশিক্ষার্থীদের বই ও পত্রপত্রিকার কাছে টেনে আনা। তাদের পড়ালেখার মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পত্রিকা পাঠের অভ্যাস গড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পঠনে উদ্বুদ্ধ ও অভ্যস্ত করা হবে।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মিনা বেগম বলেন, ‘বাচ্চাদের (শিক্ষার্থীদের) পড়াশোনায় গতি বৃদ্ধি করার জন্য এই পেপার স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। নিয়মিত বাংলা ও ইংলিশ পত্রিকা স্ট্যান্ডে রাখা হবে। এর মাধ্যমে তাদের রিডিং দক্ষতা বাড়ানো হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন তথ্য জানতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদপত্র পাঠ অনেকটা উঠে যাচ্ছে। আমরা যেমন পড়েছি, এখন সেভাবে আর পড়তে দেখি না। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। পত্রিকার মাধ্যমে পড়াশোনা ও জানার আগ্রহটা তৈরি করাই আমাদের উদ্দেশ্য। স্ট্যান্ড তৈরিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেছে।’

সংবাদপত্র স্ট্যান্ডটির উদ্বোধনের পর দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘুরেফিরে স্ট্যান্ডের কাছে এসে পত্রিকার বিভিন্ন সংবাদ, ফিচার পড়ছে ও ছবি দেখছে। পাতা উল্টেপাল্টে অনেক কিছুর ওপর চোখ রাখছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, পৃষ্ঠপোষক পেলে দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত করার চেষ্টা করা হবে। এর আগ পর্যন্ত এখন যেমন শিক্ষকেরা কিনে আনেন, সেভাবেই পত্রিকা কিনে নেওয়া হবে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৩। শিক্ষক আছেন সাতজন।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক লতিফা নিলুফার বলেন, শিক্ষক মিনা বেগমের সঙ্গে আলাপ করে এই পত্রিকা স্ট্যান্ড তৈরি করেছেন। এই স্ট্যান্ডে শুধু দৈনিক পত্রিকাই নয়, শিশুতোষ ম্যাগাজিন, বইও রাখা হবে। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বই পাঠে আগ্রহী করা, দ্রুত পাঠে দক্ষ করে তোলা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৯/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading