নিজস্ব প্রতিবেদক।।২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে। সবশেষ গত অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। এটি গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই বছর ধরে অস্থির ছিল ডলার বাজার। এ সময়ে ডলারের দাম ৮৫ থেকে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। এতে ধারাবাহিকভাবে ডলারের রেট বাড়ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আমদানি করার ক্ষেত্রে নানা হিসাব কষছেন। আর এ কারণে তখন থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, জুলাই-আগস্টের গণ- অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল হয়নি। এ অনিশ্চিত পরিবেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। আবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বাড়ছে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার অনেক বেড়েছে। তাই উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী নয় ব্যবসায়ীরা। এতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ব্যাংক খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ২০২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে (অক্টোবর-২০২৩) ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। যদিও ২০২৩ সালের অক্টোবরে তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সেই মুদ্রানীতি আর পরিবর্তন করা হয়নি। যদিও কয়েকবার নীতিসুদহার বাড়ানো হয়েছে।
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, জুনে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মেতে ১১ দশমিক ১ শতাংশ, এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া মার্চে ছিল ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
২০২২ সালের প্রথমদিকে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। একই বছরে তা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। পরে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকলে তা কমিয়ে আনতে নীতি সুদহার রেপো বাড়ানো হয়। মুদ্রানীতিতে আরো সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে আবার কমতে শুরু করে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি। এখন তা কমে ৮ শতাংশের ঘরে এসেছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
অপরদিকে নভেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশে উঠেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, গত মাসে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তার আগের মাস অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
নভেম্বরে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
শিক্ষাবার্তা /এ/০৮/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.