এইমাত্র পাওয়া

মিরপুর: জালিয়াতি করে শিক্ষকের এমপিওভুক্ত করালেন প্রধান শিক্ষক

আল আমিন হোসেন মৃধা, ঢাকাঃ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছিল ২৭ হাজার ৭৪ প্রার্থী। চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া এসব শিক্ষকদের ঐ বছরের ১৯ অক্টোবরের মধ্যে যোগদান করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল এনটিআরসিএ। এই সুপারিশে সুপারিশপ্রাপ্ত হন কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাত জন শিক্ষক। এনটিআরসিএ’র বেঁধে দেওয়া সময়সীমা  ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ছয় শিক্ষক যোগদান করেন এবং ১ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে এমপিওভুক্ত হন। ছয় শিক্ষকের যোগদান এবং তাদের এমপিওভুক্তির ৬ মাস পরে জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে স্কুলটিতে হঠাৎ করে আবির্ভুত হয়ে সুপারিশ প্রাপ্ত অপর প্রার্থী (১৯ অক্টোবরের মধ্যে যোগদান করেননি) যোগদান করেন এবং জুলাই মাসে এমপিওভুক্ত হন। হটাৎ করে স্কুলে এসে ক্লাস নেওয়া শুরু করলে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম হয়। যোগদানের জন্য এনটিআরসিএর বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আট মাস পরে এসে স্কুলে উপস্থিতি ও এমপিওভুক্ত হওয়া ঐ শিক্ষক হলেন সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) জাহিদুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখের রেজুলেশনের মাধ্যমে ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে মধ্যে ৪র্থ গণ বিজ্ঞপ্ততিতে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রাপ্ত সাত শিক্ষক মো. মুন্সি লিমন, মো. সোহানুর রহমান, মো. সোলাইমান আল মুন্সি, মোছা. সাহিদা খাতুন, মো. বিদ্যুৎ বিশ্বাস, মো. আক্তার হোসেন ও মো. জাহিদুল ইসলামের যোগদানের সিদ্ধান্ত হয়। ১ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে সাত শিক্ষকের মধ্যে মো. জাহিদুল ইসলাম বাদে ছয় জন শিক্ষক যোগদান করেন। জাহিদুল ইসলাম যোগদান না করায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক যোগদানকৃত এই ছয় শিক্ষককে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন পাঠান। ১ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখের এই ছয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হন। স্কুলটিতে সবকিছু স্বাভাবকই চলছিল। জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে হঠাৎ করে ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত জাহিদুল ইসলাম স্কুলটিতে উপস্থিত হন এবং ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। যোগদান না করে  এতদিন পরে এসে কিভাবে একজন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। শিক্ষাবার্তা’র হাতে থাকা স্কুলটির হাজিরা খাতার কপিতে ১ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে থেকে ৩০  জুন ২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় জাহিদুল ইসলাম নামের কোন শিক্ষক নেই এবং স্বাক্ষর নেই।  জুলাই (২০২৪) মাসে এমপিওভুক্ত হবার পরে তিনি স্কুলটিতে উপস্থিত হন। 

স্কুল সূত্র বলছে, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) জাহিদুল ইসলামের জন্য নতুন করে রেজুলেশন করে ১১ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে নিয়োগ পত্র দেখিয়ে এবং ১৫ অক্টোবর যোগদান দেখান প্রধান শিক্ষক। ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখ থেকে হাজিরা খাতা নতুন করে বানিয়ে  ৩০ জুন ২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত জাহিদুল ইসলামের উপস্থিতি দেখান। 

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের যোগদানের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করে এনটিআরসিএ সেখানে বলাছিল, “১৯ অক্টোবরের (২০২৩) মধ্যে যোগদানের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর অনুকূলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগপত্র ইস্যু করবে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর অনুকূলে নিয়োগপত্র ইস্যু করা না হলে কিংবা যোগদানপত্র গ্রহণ করা না হলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানানো হবে।” 

ঐ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “পরবর্তী এনটিআরসিএ বিধি মতে যোগদান করা শিক্ষকদের যোগদানের নির্ধারিত তারিখের পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা (প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ) তাঁদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের http://ngi.teletalk.com.bd লিংকে প্রবেশ করে যোগদান অপশনে ‘ইয়েস’ ক্লিক করবেন। প্রার্থী যোগদান না করলে ‘নো’ ক্লিক করে যোগদান না করার কারণ উল্লেখ করবেন।” 

অর্থ্যাৎ এনটিআরসিএ’র বিধিমোতাবেক ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখের মধ্যে যোগদান না করা প্রার্থীদের ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের http://ngi.teletalk.com.bd লিংকে প্রবেশ করে যোগদান অপশনে ‘নো’ ক্লিক করে যোগদান না করার কারণ উল্লেখ করবেন।” তাহলে ‘নো’ অপশন ক্লিক করার পরে কিভাবে শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে যোগদান করালেন? যোগদানের বেঁধে দেওয়া সময় সীমার আট মাস পরে কিভাবে ঐ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেন প্রশ্ন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের। 

তবে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়ার আলীর দাবি বিধিমোতাবেক নিয়োগ হয়েছে। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি দাবি করেন জাহিদুল ইসলাম বিএড করার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন। তবে জাহিদুল ইসলামের দাবি তার বাবা অসুস্থ্য ছিলেন। তাই তিনি ছুটি নিয়েছিলেন। 

কিভাবে এতদিন পরে এসে যোগদান ও এমপিওভুক্ত হলেন জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  আমি সঠিক সময়ে যোগদান করেছি, বাবা অসুস্থ থাকায় ছুটি নিয়েছিলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়ার আলী শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তিনি নির্দিষ্ট তারিখে এনটিআরসির নিয়ম মেনে যোগদান করেন। তার বিএড পরীক্ষা থাকায় দুই মাসে ছুটিতে ছিলেন।

শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের এমপিওভুক্ত করানোর সময়ে মিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা ছিলেন মোঃ জয়নাল আবদীন। বর্তমানে তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ায় এই পদটি শূন্য থাকায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাঃ আমিরুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে এখানে রুটিন ওয়ার্ক করছি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না ।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৪/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.