নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ পতিত শেখ হাসিনার সরকার গত ১৬ বছর পাচার করেছেন প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা। কেউ করেছেন অর্থ পাচার কেউবা অর্থ আত্মসাৎ আবার কেউ করেছে ভুমি দখল। হাসিনা পালালেও এই দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছেন শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার আমিন হাওলাদার। এলাকায় ভুমিখেকো নামেই বেশি সমাদৃত তিনি। হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালালেও হাসিনার ছত্রছায়ায় অপকর্ম করা আমিন হাওলাদার যেন অপ্রতিরোধ্য ও দখলবাজীতে অজেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের নিয়োগ করা দুদকের সাবেক মহাপরিচালক, পরিচালক ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের প্রভাব (আমিন হাওলাদারের আপন ছোট ভাই জাকির হোসেন) ও আওয়ামী লীগের একাট্টা ক্ষমতার দাপটে সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, খাস জমি দখল, জমি বিক্রি করে রেজিস্ট্রেশন করে না দেওয়া, জোর পূর্বক নামে মাত্র জমি লিখে নেওয়াসহ একাধিক অপকর্মের সাথে জড়িত আমিন হাওলাদার। আওয়ামী লীগের আমলে বড় কোন পদ পদবীধারী না হলেও তিনিই যেন ছিলেন আওয়ামী লীগের গড ফাদার। তার কথাই সেখানে শেষ কথা। কথা না শুনলে প্রশাসন দিয়ে হয়রানি, দুদক দিয়ে মামলা করানোর হুমকি মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখাতেন তিনি।
জানা গেছে, সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিন হাওলাদার চরচান্দা খাশ মহল বাজারে একাধিক সরকারি যায়গা দখল করে ঘর তুলেছেন। বাজারের পূর্ব পাশে ১৬ ফিটের সরকারি রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে রাস্তার উপর অবৈধ ভবন নির্মাণ করে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। তাছাড়া তিনি সহ আরও ১০ জন সহযোগী মিলে বাজারের পূর্ব পাশের গলিতে মাছ বাজারের জন্য নির্ধারিত জায়গা ভুয়া দলিল করে দখল করার পায়তারা করছেন। একই বাজারের কালু হাওলাদারের যায়গা জোর পূর্বক দখল করে মাদক কারবারি ফাইজু হাওলাদারকে ঘর তুলে দিয়েছেন । তিনি আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে একই জেলার ডামুড্যা উপজেলা বালীকান্দী সংলগ্ন চরনারায়নপুর মৌজায় ১৬০ শতাংশ জমি রজ্জব মাষ্টারের নিকট বিক্রি করে এখনো পযর্ন্ত উক্ত জমি দলিল করে দেয়নি।
শুধু তাই নয় তিনি চরচান্দা খাশ মহল বাজারের হিন্দু পরিবার অনিল ঘোষের নিকট প্রায় ২৫ বছর পূর্বে চরফেলিচ মৌজায় ১৬০ শতাংশ জমি বিক্রি করে এখনো পযর্ন্ত দলিল করে দেয়নি মর্মে মৃত অনিল ঘোষের দুইছেলে রনজিত ঘোষ ও গোবিন্দ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চরচান্দা খাশ মহল বাজারের ব্যবসায়ী শাহাজাহান তালুকদারের জমি দখল করে রেখেছেন আমিন হাওয়ালাদার। এ নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে শাহাজাহান তালুকদার ভেদরগঞ্জ ভূমি কর্মকর্তার ((এসিল্যান্ড) এর নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “আমি গত ৬০/৭০ বছর যাবত আমার দখলকৃত একটি একশনা চান্দিনা ভিটা ভোগদখল করিয়া আসিতেছি। যাহার মৌজা নং ৮৮ নং চরচান্দা, খতিয়ান নং ০১, জমির পরিমান .৫০ শতাংশ উক্ত চান্দিনা ভিটাটি আমার মৃত পিতা মোহাম্মদ আলী তালুকদার এর নামে গত ০৫/০৬/১৯৯১ সালে একশনা লীজ প্রদান করা হয়েছে। আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি বহুবার চেস্টা করেও লীজ প্রদান করতে পারিনি। বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আমিন হাওলাদার সহ মোট ১০ জন প্রতিনিয়ত আমাকে আমার দখলকৃত দোকান ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে যেতে বলে। আমি তাদের নিকট এর কারন জানতে চাইলে আমাকে বলে তারা নাকি উক্ত জমি ক্রয় করে মালিক হয়েছে। তারা কবে কিভাবে জমির মালিক তা আমার জানা নাই। যে কোন সময় তারা আমার দোকান ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে যেতে পারে এবং প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের কথামত ঘর ভেঙ্গে নিয়ে না নেই তাহলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে ফাসিয়ে দিতে পারেন। আমি বর্তমানে ভয়ভীতির মধ্যে আছি। এমতাবস্থায় উপরে উল্লেখিত ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থ্যা গ্রহনে আপনার সদয় মর্জি কামনা করি।”
এ বিষয়ে সখিপুর থানায় আরও একটি লিখিত অভিযোগ দেন শাহাজাহান তালুকদার। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলমান আছে।
জানা গেছে, চরচান্দা খাশ মহল বাজারের পূর্ব পাশে সরকারি নথি ও বিআরএস খতিয়ান অনুযায়ী, বিআরএস খতিয়ানের ৮১৭৬ নং দাগটি সরকারি রাস্তা হিসাবে নথিভুক্ত। রাস্তার দক্ষিণ পাশের মুখটি পুরাপুরি বন্ধ করে ঘর তুলে রেখেছেন আমিন হাওলাদার। সরকারি রাস্তাটি অবমুক্ত করার জন্য জনস্বার্থে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনির হোসেন গত ৫ সেপ্টেম্বর ২৪ তারিখে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মনির হোসেন বলেন, অভিযোগ দায়ের দুই মাস পার হলেও কেন এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি আমার জানা নেই। সরকার পালালেও এই চক্রের এত প্রভাব কোত্থেকে পায় সেটা প্রশাসনই ভালো জানেন। এখনও তারা এতটাই প্রভাবশালী প্রশাসনও নিশ্চুপ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করব।
জানতে চাইলে আমিন হাওয়ালাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে আবার ফোন করা হলে প্রশ্ন শুনে ও প্রান্ত থেকে কোন উত্তর না দিয়ে লাইনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) পদ শূন্য থাকায় ভূমি অফিসের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, আমিন হাওলাদের আপন ছোট ভাই জহির হাওলাদার এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৪/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.