এইমাত্র পাওয়া

শ্রেণিকক্ষ দখলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে ইবিতে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন

জামাল উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শ্রেনিকক্ষ দখল নিয়ে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন করেছেন চারুকলা এবং ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় প্রশাসন ভবনের সামনে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ কর্তৃক দখলকৃত কক্ষসমূহ দখলমুক্তের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে চারুকলা বিভাগের বিপক্ষে পাল্টা অবস্থান নেন ওই দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

চারুকলা বিভাগের দাবি রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় তাদের নামে দেওয়া বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ওই দুই বিভাগের দখলে থাকায় সেখানে উঠতে পারছেন না তারা। এদিকে বিভাগ দুইটির দাবি কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি বৈষম্য করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ চারুকলা বিভাগকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় ২৩টি ও পঞ্চম তলায় ১টি কক্ষসহ ২৪টি কক্ষ বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে পঞ্চম তলায় ১৫টি ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগকে একই তলার ১৭টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর আগে গত আগস্টে অনুষদীয় সভায় বিভাগগুলো নামে এসব কক্ষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে পূর্বে চারুকলা বিভাগের নামে বরাদ্দকৃত কক্ষসমূহ দখল করে। পরে বিজ্ঞপ্তি আকারে নির্দেশনা এলেও দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে নারাজ বিভাগ দুইটি। এ দিকে বরাদ্দকৃত কক্ষে ঢুকতে না পেরে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য অতি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলে মানববন্ধন তুলে নেন তারা।

এ দিকে কোনো সমাধান না হওয়ায় রোববার ফের আন্দোলন শুরু করেছে বিভাগটি। ওই দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বরাদ্দকৃত কক্ষসমূহ দখলমুক্ত করার দাবি জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও প্রশাসন ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত উপাচার্যের সময় থেকে আমরা চতুর্থ তলায় ক্লাস করেছি। সেই সময় উপাচার্য আমাদেরকে এই কক্ষগুলোতে ক্লাস অব্যাহত রাখার কথা বলে।

চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন আমাদেরকে আশ্বস্ত করলেও এখনো আমাদের বরাদ্দকৃত শ্রেনিকক্ষ বুঝিয়ে দেয়নি। বর্তমানে আমাদের পাঁচটি ব্যাচ চলমান। নিজেদের কোনো ক্লাস রুম না থাকাই অন্য বিভাগে আমাদের ক্লাস করতে হয়। অন্য বিভাগের শিক্ষকরা যখন ক্লাস নিতে আসলে তখন আমাদের ক্লাস চলা অবস্থায় বাধ্য হয়ে বের হতে হয়। আজ ক্লাস, পরিক্ষা ও ভাইভা থাকা স্বত্তেও আমাদের এই মানববন্ধন করতে হচ্ছে। করণ যারা অন্যায়ভাবে আমাদের ক্লাস রুম দখল করে আছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন আমাদের বরাদ্দকৃত কক্ষ বুঝিয়ে না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ক্লাস পরিক্ষায় ফিরবো না এবং আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

চারুকলা বিভাগের নবনিযুক্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। প্রশাসন থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তাদের উঠতে দেওয়া উচতি। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।

স্টাডিজ ও ফোকলোর সটাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছি, তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি গায়ের জোরে নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে আমাদের করার কী থাকে, আমরা তো আর পুলিশ প্রশাসন না। আমার মনে হয়, উপচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব করা হচ্ছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। ওই ভবনের সমস্যা সমাধানে অনুষদীয় ডিন এবং বিভাগের সভাপতিদের সঙ্গে বসে বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.