কুয়াকাটাঃ অবশেষে সেই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস। গত বৃহস্পতিবার (৩১অক্টোবর) উপজেলা শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়ালীর মহিপুর থানাধীন ১২৮ নং চরধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার নামে তামাশা। এমন শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে প্রধান শিক্ষক আলামিন বিশ্বাস, তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা ও তাদের কন্যা সহকারী শিক্ষিকা সাওদা’র বিরুদ্ধে। এরপর নড়ে চড়ে বসেন শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুল পরিদর্শন করে শোকজ করেন ওই শিক্ষককে।
অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫-১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এভাবে চলে আসছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম।
স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। মনগড়া ও নিজেদের খেয়ালখুশিমত চালাচ্ছেন পাঠদান।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়।
দশটার সময় ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা সেও দশটার কিছু পরে আসেন, সাড়ে দশটার দিকে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল-আমিন বিশ্বাস।
ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীশূন্য। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন সহকারী শিক্ষিক জাহাঙ্গীর ও আকলিমা।
তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষিকা সাওদা রয়েছেন ছুটিতে। তবে ছুটির কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি পিতা প্রধান শিক্ষক আল-আমিন বিশ্বাস।
সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর বিদ্যালয়ের নিচ কয়েকজনকে ডেকে শিক্ষার্থী সাজিয়ে প্রথম শ্রেণির কক্ষে ঢুকিয়ে বেঞ্চে এনে বসান। তখনো বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে অপর কক্ষগুলো শিক্ষার্থীশূন্য। সোজা কথায় বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন ৩ জন।প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ায় কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে একই ফ্যামিলির প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন থাকায় তারা পালা বদল করে ক্লাস নিচ্ছে।
বাবা আসলে মেয়ে আসেননা, মা আসলে বাবা আসে না এ যেন চোর পুলিশের খেলা খেলছে শিক্ষার্থীদের সাথে। যার ফলে এখানে বাচ্চাদের দিলে তাদের লেখাপড়ার কোনো উন্নতি হয় না, তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্রে নিয়ে যেতে হয় এমন অহরহ অভিযোগ উঠেছে।
সজীব তালুকদারসহ স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা বলেন, সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সুন্দর ও স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারো মুখরিত হয়ে উঠুক। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।
অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না, নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টায়, কখনো ১১টায় আসেন। তারা ঠিক মতো ক্লাস নেয় না। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।
সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে গত দুই দিন স্কুলে আসেননি। তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দায় শিকার করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস, শোকজ’র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে চর ধুলাসার সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। নোটিশের জবাবের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.