এইমাত্র পাওয়া

বেরোবির শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী আত্মগোপনে

রংপুরঃ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জুলাইয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১০০ জনের খোঁজ মিলছে না। প্রায় তিন মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি বা দাপ্তরিক কার্যক্রমেও তারা আছেন অনুপস্থিত।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, শিক্ষার্থী হত্যা, হামলা করে আহতের ঘটনায় ১৬ জুলাই এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই শিক্ষক, চার কর্মকর্তা, পাঁচ কর্মচারী ও অন্তত ৮০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই কর্র্তৃপক্ষের কাছে।

গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও বহিরাগত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হামলায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের আবু সাঈদ মিয়া এবং আহত হন প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক। আবু সাঈদ নিহতের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ওইসব হামলাকারীকে ধাওয়া দেন আন্দোলনকারীরা। ধাওয়ার মুখে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এবং গ্যারেজের পেছনের দেয়াল টপকে বেরিয়ে যান। ওইদিন সরাসরি হামলায় জড়িত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, পলাশসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। আর সরকার পতনের পর এবং গেটের সামনে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসার পর থেকে হামলায় জড়িত অন্য শিক্ষক লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল, কর্মকর্তা তৌহিদুল জনি, হাফিজুর রহমান তুফান, কর্মচারী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, নুরুন্নবী, সুবহান মোক্তার, আমির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে রয়েছেন।

এদিকে হামলা ও আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই ১৭ নামধারী আসামি ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে তাজহাট থানায় মামলা করেন। এ মামলার আসামির মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামধারী অন্তত ছয়জন।

এ ছাড়া অনেক ছাত্রলীগ কর্মী রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এখনো আসেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে এলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তারা এবং শিক্ষার্থীরা পরে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে জুতার মালা টানিয়ে রাখেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তারা অন্যায় করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার সামনে ঘোরাফেরা করছেন। এই প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আসামিরা কোথায় আছেন, তা এখনো পুলিশ শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এসব খুবই দুঃখজনক।’ 

এদিকে আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মাত্র দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তারা বলেন, ‘হলের একটা সিটের জন্য আমরা নিরুপায় হয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করি। সভাপতি, সম্পাদকসহ কট্টর ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের বাধ্য করে তাদের প্রোগ্রামে যেত। তবে আমরা যে এসবে এভাবে জড়িয়ে যাব ভাবতে পারিনি। আজকে এসবের কারণে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি ও হামলায় জড়িত থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের বিচার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, তদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী যদি কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মতামত সাপেক্ষে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত নেব।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৯/১০/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.