ফরিদপুরঃ ক্লাসে ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ব্রাম্মণডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান মিলু (৫০) ও সহকারী শিক্ষক দ্বীপক কুমার সরকারের (৩৫) বিরুদ্ধে। যৌন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে ওই দুই শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে গেল কয়েকদিন ধরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি আন্দোলনে গিয়ে হামলার শিকারও হয়েছে তারা। এমন অবস্থায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও ওসির কাছে গত এক সপ্তাহে ৩টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ব্রাম্মণডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান মিলু ও সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) দ্বীপক কুমার সরকার বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। ক্লাস চলাকালে ওই দুই শিক্ষক ছাত্রীদের অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। সুযোগ পেলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন তারা। কোনো কোনো ছাত্রীর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের বাজে প্রস্তাব দেন।
এসব বিষয় প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি দেন তারা। এমন অবস্থায় ওই শিক্ষকদের বিচার ও অপসারণ দাবি করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাও চালায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের অনুসারীরা।
অন্যদিকে অনিয়মের মাধ্যমে বদিউজ্জামান এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তার কাছে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করানো হয়।
কেউ যদি প্রাইভেট না পড়ে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একসময় উপজেলার মধ্যে ভালো রেজাল্টের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল এই বিদ্যালয়। তার অদক্ষতায় বর্তমানে বিদ্যালয়টির রেজাল্ট সবচেয়ে খারাপ। গত নির্বাচনী পরীক্ষায়ও অনেক দুর্নীতি করেন তিনি। যে সকল শিক্ষার্থীরা তার পরামর্শ মতো কাজ করে, তারা দুর্বল হওয়ার পরেও নির্বাচনী পরীক্ষায় তাদের পাস করিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবলে তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ২০১৯ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার ভাতিজা অভিযুক্ত বদিউজ্জামানকে নিয়োগ দেন। এরপর বেলায়েত হোসেন অবসরে যাওয়ার পর গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অর্থের বিনিময় গত ৬ জুলাই বদিউজ্জামানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ব্রাম্মণডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান মিলু। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন ২-৪ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়েছি। প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর তাও পড়াই না। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয় তিনি বলেন, হামলা আমার ইন্ধনে হয়নি। শিক্ষার্থীদের একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) দ্বীপক কুমার সরকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমারও সন্তান আছে। আমি এমন কাজ করতে পারি না। তবে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় বা এসেম্বলীর (সমাবেশ) সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ছাত্রীর শরীরে হাত লাগতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে কারো গায়ে হাত দেয়নি। এটাকে ভিন্নখাতে নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির বলেন, ব্রাম্মণডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটির রূপরেখা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনা নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে ঝামেলা ও উত্তেজনা চলছে। আমি কয়েকবার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। তবে বর্তমানে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৯/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.