রাজশাহীঃযৌন হয়রানির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি ড. এনামুল হককে দুইবছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল সিন্ডিকেট। ওই অব্যাহতি প্রত্যাহার করতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্য শিক্ষকদের নেমপ্লেট ভাংচুর করা এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ড. এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে গত রবিবার (১৫ আগস্ট) উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, বিভাগের সভাপতি ড. মজিবুল হক আজাদ খান গত ৮ সেপ্টেম্বর বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং ডাকেন। মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে সভাপতির কাছে মিটিং এজেন্ডা জানতে চাইলে সঠিক উত্তর না দিয়ে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক বিভাগের ছাত্র এবং কিছু বহিরাগত ছাত্র একত্রিত হয়ে বিভাগের ৫২৫ তম সিন্ডিকেট সভার ৩৮ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন হয়রানির অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. মো. এনামুল হককে বিভাগে ফেরত আনার জন্য হট্টগোল শুরু করেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সভাপতি এবং তার অনুগত ২-১ জন শিক্ষক ড. নাজমা আফরোজসহ অন্য শিক্ষকদের মনোবিজ্ঞান গবেষণাগার-১ এ নিয়ে যান
সেখানে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে ড. নাজমার কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু তিনি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করায় তিনিসহ উপস্থিত সব শিক্ষককে ওই গবেষণাগারে অভুক্ত অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। পরে তারা জানতে পারেন প্রফেসর ড. মো. এনামুল হক তার কতিপয় সহযোগী এবং বখাটে কিছু ছাত্রের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদেরকে আটক রাখে। অভিযোগে তিনি বলেছেন, অভিযুক্ত শিক্ষক, বিভাগের সভাপতি এবং তাদের সহযোগী ২-১ জন শিক্ষকের কারণে তিনি শিক্ষক হিসেবে বিভাগে উপস্থিত হয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন।
অভিযোগ পত্র থেকে আরও জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর সভাপতির অফিস কক্ষে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় এবং বিভাগে ড. নাজমা আফরোজ, ড. নূরে আলম সিদ্দিকী, ড. কাজী ইমরুল কায়েশ, ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া ও ড. সাদেকা বানু-র নেমপ্লেট ভাঙচুর করে এবং বিভাগের অফিস কক্ষসহ সবার কক্ষে তালা লাগিয়ে এবং ফুলের টব ভাঙচুর করে ভীতিজনক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। পরে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে তারা সেখান থেকে মুক্ত হন। বিভাগে বর্তমানে নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ কোনোটিই বিদ্যমান নেই বলেও অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ড. নাজমা আফরোজ বলেন, আমার সাথে পরপর দুইদিন এ ঘটনা ঘটেছে। আমি খুব ভীতিকর অবস্থায় আছি। কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছি না। যৌন নিপীড়ক শিক্ষক ড. এনামুল হক তার শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। আমি সঠিক বিচারের আশায় উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি করবো।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. এনামুল হক বলেছেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। তার কথায়, আমার সঙ্গে আপাতত বিভাগের সম্পর্ক নেই। এখন কে বা কারা এমনটা করছে, তা বুঝতে পারছিনা। সাধারণ বিভাগ থেকে মাঝেমধ্যে কোনো প্রয়োজন বা, কোনো কাগজপত্রের দরকার পড়লে আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু সার্বিক বিষয়ে আমি অবগত নই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বিষয়টি নিয়ে বলেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ আজকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি বেশ জটিল। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২১ মে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক ড. নাজমা আফরোজ ও তৎকালীন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া উপাচার্য বরাবর নয়জন শিক্ষকের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক ড. এনামুল হককে দুই বছরের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
অধ্যাপক এনামুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি রাবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ছিলেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৯/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.