এইমাত্র পাওয়া

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকার বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৫৪ কোটি ৩৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৯২তম সভায় এই বাজেট অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেট সভায় বাজেট উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

গত বছর এই বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ বছর বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭০ কোটি ১৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বা ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

বাজেটে জানানো হয়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে ৩৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেটে চিকিৎসা ও শৈল্য (এমএসআর) খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২৩ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা।

বাজেটে পূর্ত সংরক্ষণে ১৮ কোটি ৪০ লক্ষ, পণ্য সেবার উপখাতসমূহে ৮৭ কোটি ৩৯ লক্ষ ৬০ হাজার, যন্ত্রাংশ (মূলধন) উপখাতে ৪৪ কোটি ৫৮ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেতন বাবদ ২৭৫ কোটি ৬৫ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা, ভাতা বাবদ ২১৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং পেনশন খাতে ৪৭ কোটি ৩৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাজেটে এ বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ হতে সম্ভাব্য প্রাপ্য বরাদ্দের পরিমাণ ৬৮৩ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) হতে ২৪৫ কোটি ৫৮ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা এবং নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ শত ২৫ কোটি টাকা।

বাজেট উপস্থাপনার সময় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণা এই তিন ক্ষেত্রকে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় বাজেট প্রাপ্তির স্বল্পতা থাকলেও এই প্রাপ্ত বাজেট এবং নিজস্ব আয় দিয়ে মানসম্মত ও সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা, গুণগত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বমানের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন হল ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করা। এই অংশ হিসেবে দেশের ক্রমবর্ধমান জনগণকে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দিকে লক্ষ্য রেখে এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ সময় তিনি তাঁর বক্তব্যে বিনামূল্যে জন্মগত শিশু হৃদরোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দরিদ্র রোগীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, অটোমেশন কার্যক্রম, গবেষণার জন্য জেনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাব প্রতিষ্ঠা, অনলাইনে রিপোর্ট প্রদানসহ ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) ও বিভিন্ন বিভাগের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম তুলে ধরেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বৃত্তি ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে। স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের থিসিস গ্রান্ট হিসেবে টাকা প্রদান করা হচ্ছে। রেসিডেন্সি কোর্স হল সম্পূর্ণ আবাসিক স্নাতকোত্তর শিক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনো আবাসিক হল নাই। চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্সদের আবাসিক ব্যবস্থা নেই। ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য পৃথক ২টি আবাসিক হল নির্মাণ এবং কর্মরত জনবলের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সাড়ে চার শত কোটি টাকার প্রয়োজন।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এই হাসপাতাল পুরোপুরি চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বপ্নের এই হাসপাতালটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল দিয়ে প্রতিটি কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু রয়েছে। এই হাসপাতালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অনুমোদিত প্রস্তাবিত নতুন জনবল ২ হাজার ৭৫৮ জন যা এখন পর্যন্ত জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মঞ্জুর হয়নি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনার আইনি কাঠামো নির্ধারণের জন্যে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

রোগীদের সেবার মানোন্নয়নের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের আমলে মুমূর্ষু শিশু রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ২০ বেডের পিআইসিইউ এইচডিইউয়ের আধুনিকায়নসহ চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেবিন ব্লক এবং সি ব্লকে রোগীদের সেবাবান্ধব একটি করে উন্নতমানের ইনডোর ফার্মেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডি ব্লকে একটি কার্ডিয়াক স্টেন্ট (রিং) সেন্টার ও একটি অর্থোপেডিক প্রোস্থেসিস সেন্টার চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বিএমআরসির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সংসদ সদস্য আফম রুহুল হক, এমপি, অধ্যাপক মো, আব্দুল আজিজ, এমপি, সৈয়দা জাকিয়া নুর, এমপি, ইউজিসির সদস্য ও চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান, বিসিপিএসর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খানসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০৬/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.