মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: কোনো একটা দেশে শিক্ষকতা করা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেখলাম ১৫/১২ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনা একজন ব্যক্তির ও তার বাবার ছবি দিয়ে সামাজিক ঘৃণার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় এই শিক্ষক দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় মাঝে মাঝে লিখে। পপুলিস্ট নানা ইস্যু নিয়ে। আমি কিছুটা আশ্চর্য্য হয়েছি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এ ধরনের পপুলিস্ট অ্যাক্টিভিজম নিয়ে। এ ধরনের অ্যাক্টিভিজম সাধারণ কেউ করলে মানায়, দুর্নীতির কারণে বিরক্ত কেউ করলে মানায়, পলিটিকাল এক্টিভিস্ট করলেও মেনে নেওয়া যায়, সাংবাদিক করলেও মানায়, কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেন ধারণার ভিত্তিতে একজনের ছবি সহ সামাজিক ঘৃণার আহবান জানাবে? এ ধরনের পপুলিস্ট অ্যাক্টিভিজম কোনো ধরনের জ্ঞানচর্চা, যেখানে আপনি একজন মানুষকে ধারণার ভিত্তিতে এক্সপোজ করে সামাজিক ভাবে হেয় করছেন? এটা কি চরম মানবাধিকার লংঘন নয়? দেশের আইনে যিনি এখনো দোষী সাব্যস্থ হয়নি এমন কারো ছবি সহ সামাজিক ঘৃণার ডাক দেয়া কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার অবস্থান থেকে করতে পারে?
এ ধরনের পোস্ট ইন্সট্যান্ট পাবলিক রিয়েকশন পায়, ব্যাপক বাহবা পায়, অনেক লাইক শেয়ার কমেন্ট পায়। দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ মানুষ এইগুলোতে সহজেই কানেক্ট করতে পারে। সবই ঠিক আছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজেই একটা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান, জ্ঞান তৈরি, ক্রিটিকাল থিংকিংয়ের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলা উনার কাজ। সামাজিক স্কেভেঞ্জার হওয়া উনার কাজ না। এইগুলো অ্যাক্টিভিস্টরা করবে। অ্যাক্টিভিস্টের কাজ করে শিক্ষক, আর শিক্ষকের কাজ করে অ্যাক্টিভিস্ট। সস্তা বাহবা পাওয়ার এই নেশা আমাদের কার কি কাজ, সেই লাইনকে ব্লার করে দিচ্ছে।
তাই বলে সেই শিক্ষক কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে না? অবশ্যই নিবে। উনি এটা নিয়ে আলোচনা লিখবে, এটার স্বরূপ নিয়ে লিখবে, দুর্নীতির তত্ত্ব নিয়ে লিখবে, এ ধরনের দুর্নীতি কেন তৈরি হচ্ছে সেটার সোশ্যাল, পলিটিকাল ম্যাকানিজম নিয়ে লিখবে, এটার রুট কজ কীভাবে এড্রেস করা যায় সেটা নিয়ে লিখবেÑকিন্তু কারো ছবি ব্যবহার করে সামাজিক ঘৃণার ডাক দেওয়া একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাজ নয়। ভাইরাল হওয়ার চাপ, জনপ্রিয় হওয়ার চাপ যে পপুলিস্ট ট্রাপ তৈরি করে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ ( টুরিস্ট পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেখি উনার সুশ্রী মুখশ্রী ব্যবহার করে রীতিমত সেলিব্রেটিদের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কাপাচ্ছে) তাদের পদবী ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ব্যবহার করে কেউ করছে মোরাল পুলিশিং আর কেউ করছে অসিহত। কিন্তু এইগুলো কোনোটাই তাদের কাজ না।
জনপ্রিয় হওয়ার ও জনপ্রিয় থাকার নেশা আমাদের সবাইকে মোরাল পুলিশ বানিয়ে দিয়ে সমাজ থেকে দিন দিন মোরালিটি ও কালেকটিভ এথিক্স কেড়ে নিচ্ছে। জায়েদ খান এবং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার কারণের মধ্যে পার্থক্য হওয়া উচিত। দুজনের ওডিয়েন্স ভিন্ন হওয়া উচিত। এটা ক্লাস কনসাসনেশ থেকে বলছি না। দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বলছি। ইস্যু পেলেই ঝাপিয়ে পড়ে ন্যূনতম এথিক্স মেন্টেন না করে একজন শিক্ষক যা ইচ্ছা তাই বলে দিতে পারে না। এটা সেলফ সেন্সরশিপের ব্যাপার। এটাই এজেন্সি। এই এজেন্সি না থাকলে শিক্ষক তার সামাজিক ও ইন্টেলেক্ট চর্চার দায়বোধের জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেইন, যুক্তরাষ্ট্র
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০৬/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.