নিজস্ব প্রতিবেদক।।
পড়া ভুল করায় শিশু মাসুম হাসানকে (১২) মাদ্রাসায় হাত-পা বেঁধে বেত দিয়ে পেটান শিক্ষক মো. মান্নান। বাড়িতে না জানাতে ভয়ও দেখান শিক্ষক। ২৬ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাদরাসাতুল হামিদিয়া আল ইসলামিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। ১৩ বছর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাস্তি নিষিদ্ধ করা হলেও এখনো ঘটছে। কখনো কখনো শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও যেতে হচ্ছে।
কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্রেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বার্ষিক শিশু অধিকার পরিস্থিতি, ২০২৩-এ বলা হয়েছে, গত বছর শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৪০ জন শিশু। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শিক্ষকের কাছে নির্যাতনের শিকার ১২ শিশু।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে শারীরিক শাস্তি বিলোপ দিবস। শিশুদের ওপর সব ধরনের শারীরিক শাস্তি বন্ধে সচেতনতা তৈরিতে দিবসটি পালন করা হয়।
আসক বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের নির্যাতন নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং সরকারের এ-সংক্রান্ত পরিপত্র থাকা সত্ত্বেও বছরজুড়ে শিশুরা শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘শিশুরাই সব’-এর আহ্বায়ক লায়লা খন্দকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অভিভাবক, শিক্ষকসহ অনেকের মাঝে একটা ধারণা রয়েছে যে শাস্তি শিশুদের সঠিক আচরণ করতে শেখায়। এটা ভুল।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু জরিপ-পূর্ববর্তী এক মাসের মধ্যে শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে। বিশ্বের ৬৫টি দেশ সব জায়গায় (বাড়ি, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, বিকল্প শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান) শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। দেশে এমন আইন এখনো হয়নি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের শেখানোর কৌশল হিসেবে শাস্তি একটি অকার্যকর পদ্ধতি। শিশুদের সঠিকভাবে বড় করার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা এবং বয়স অনুযায়ী নির্দেশনা।
এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, বেশির ভাগ অভিভাবক ও শিক্ষকদের ধারণা, ‘মারের ওপর ওষুধ নাই’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শারীরিক শাস্তি বা মারপিট স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গেও শিশু নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি সম্পৃক্ত। এ জন্য কঠোর আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ এলে আমরা খতিয়ে দেখি এবং ব্যবস্থা নিই। শিক্ষার্থীরা যেন আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং চিন্তা প্রকাশ করতে পারে, এ জন্য নতুন কারিকুলামও আমরা চালু করেছি।’
শিবা/জামান/৩০/০৪/২৪