নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের জেরে রাজধানীর সায়েদাবাদের রেজাউল করিম চৌধুরী কলেজের রসায়ন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বুধবার মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার দাস স্বাক্ষরিত পত্রে তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন করা হয়। এতে তদন্তের দায়িত্ব পান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক এবং সহকারী পরিচালক।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি “আর কে চৌধুরী কলেজ: নানা অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে দুই শিক্ষক!” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর রিজাউল করিম চৌধুরী কলেজের রসায়ন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলম ক্লাস না নিয়ে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানোসহ একাধিক অনিয়ম নিয়ে শিক্ষাবার্তা ডককম পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এমতাবস্থায়, বর্ণিত বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ ১৫ (পনের) কর্মদবিসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পরিচালক, এবং সহকারী পরিচালক (কলেজ) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ঢাকা অঞ্চল, ঢাকাকে নির্দেশক্রমে তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন দেয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তাদ্বয় বিধি মোতাবেক টিএ/ডিএ প্রাপ্য হবেন।
এ বিষয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ মনোয়ার হোসেন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তদন্তের চিঠি পেয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আর কে চৌধুরী কলেজের রসায়ন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলম দুই বছর একটা ক্লাসও নেননি, টানা চার বছর মাঝে মাঝে কলেজে এসেছেন মন চাইলে দুই একটা ক্লাস করিয়েছেন। ক্লাস নিয়েছেন প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে। ক্লাস না করলেও বেতন-ভাতা প্রতি মাসে ঠিকই উত্তোলন করেছেন। আবার বেতন নিয়েছেন প্রক্সি শিক্ষকও।
সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলমকে দেওয়া অন্তত ১৩ টি কারণ দর্শানোর নোটিশ শিক্ষাবার্তা’র হাতে রয়েছে। শুধু শোকজের নোটিশ নয় কলেজটির একাধিক মাসের হাজিরা খাতার ছবিও শিক্ষাবার্তা’র হাতে রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তার কোন স্বাক্ষর নেই। এছাড়াও গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) একটি তদন্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত থাকা এবং অনুপস্থিত থেকে প্রক্সি শিক্ষককে দিয়ে ক্লাস করিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি উঠে আসে। তবে এতগুলো শোকজ নোটিশ, ডিআইএর প্রতিবেদনে অনিয়ম জালিয়াতি ধরা পরার পরেই তিনি কেন সাময়িক বরখাস্ত হননি কিংবা কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা অজানা। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে “আর.কে চৌধুরী কলেজ: দুর্নীতিতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের চাকরি গেলেও বহাল সঙ্গীরা” এবং ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে “টানা ৬ বছর ক্লাস নেন প্রক্সি শিক্ষক বেতন নেন সহকারী অধ্যাপক সামসুল আলম“শিরোনামে শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলম পেশায় একজন শিক্ষক পরিচয়ধারী হলেও তার প্রধান পেশা ঠিকাদারি। অধিকাংশ সময়ই তিনি ঠিকাদার পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কলেজে নিয়মিত তো আসেন-ই নাই এমনকি কোন জাতীয় দিবসেও উপস্থিত থাকেননি। তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ তাকে একাধিকবার শোকজ নোটিশ দিয়েছেন। তবে কলেজটির তৎকালীন উপাধ্যক্ষ মো. রায়হানুল ইসলাম তৎকালীন গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি রসায়ন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সামসুল আলমের বন্ধু হওয়ায় অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে মিমাংশা হওয়ায় ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কলেজটিতে একটি ক্লাস না নিয়েও পার পেয়ে যান। কভিডকালীন সময়েও অনলাইনে তিনি একটি ক্লাসও করাননি। কলেজটির তৎকালীন উপাধ্যক্ষ মো. রায়হানুল ইসলাম রয়াসন বিষয়ের ক্লাস প্রক্সি শিক্ষক মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ জুম অ্যাপে নিবেন বলে জরুরি নোটিশ জারি করেন যার কপি শিক্ষাবার্তা’র হাতে রয়েছে। এছাড়াও এক কিংবা দুইটি নয় টানা ১৩ টি শোকজ নোটিশ পান এই শিক্ষক। যার কিছু জবাব দিলেও অধিকাংশ শোকজ নোটিশের কোন জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধও করেননি তিনি।
আরও পড়ুনঃ
- অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৩০ অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে!
- মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার এক মাস পার হলেও এমপিও বাতিল হয়নি অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের
- অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরতে দুই মাসেও অগ্রগতি নেই
- আর কে চৌধুরী কলেজ: তিন শিক্ষকের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার!
- আর.কে চৌধুরী কলেজ: দুর্নীতিতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের চাকরি গেলেও বহাল সঙ্গীরা
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৫/০৪/২০২৪