শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইন বদলিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সঠিকভাবে দূরত্ব যাচাই-বাছাই না করা, ভুয়া তথ্য দিয়ে অর্থের বিনিময়ে সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠানে বদলিসহ নানা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে নিজ উপজেলা ও থানায় বদলি কার্যক্রমে।
সারা দেশের অন্তত ২০ জন সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক বদলিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রও দিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি না করেই বদলির আদেশ জারি করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত বদলি নীতিমালার বিধির তোয়াক্কাও করা হয়নি।
গত ৩০ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নিজ উপজেলা বা থানায় বদলির অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়, যা চলে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। পরে আবার একই কার্যক্রম ২২ (সোমবার) এপ্রিল থেকে শুরু হবে । এটি চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত।
বদলিতে অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন শিক্ষকেরা। কখনো সার্ভার ডাউন হয়েছে। আবার ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) না আসায় আবেদন করতে পারেননি বদলিপ্রত্যাশী অনেক শিক্ষক।
বদলি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা ও ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, আবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, ওয়েবসাইটের সার্ভার ডাউন, ওটিপি আসছে না। এসব ভোগান্তি নিরসন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বদলি কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও শোনা যায়। এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কতিপয় শিক্ষক স্কুলের দূরত্বের ক্ষেত্রে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেন। বিষয়টি জেনেও অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফরোয়ার্ড করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই আবেদনটি ফরোয়ার্ড করে দেন।
এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন পাবনার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। স্বামীর অসুস্থতার কারণে তিনি আবেদন করেছিলেন নাটিয়াবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হতে। কিন্তু মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই স্কুলে বদলি হয়েছেন মাছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূরত্বের তথ্য গোপন করে স্কোর বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। উল্টো আমাকেই অভিযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবনা জেলার আরও কয়েকজন শিক্ষক জানান, পাবনা জেলায় টাকার বিনিময়ে বদলির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজার নেতৃত্বে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট সেখানে বদলির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘এগুলো সত্য নয়। নিয়মানুযায়ী সবকিছু করা হয়।’ বদলির অনিয়মের অভিযোগের আবেদন নিষ্পত্তি না করেই বদলি অর্ডার করা হয়েছে কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাতে সময় কম ছিল। এটা ঠিক হয়নি। পরে আবেদনটি যাচাই-বাছাই করা হবে।’
এই জেলার বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার কফিল উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে বদলিতে কতিপয় শিক্ষককে অনৈতিক সুবিধা দেন। যদিও এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
বদলির আবেদন করার পর তা ফরোয়ার্ড না করে আটকে রেখে অর্থ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, ইচ্ছা করে বেশ কিছু বদলি আবেদন ফরোয়ার্ড করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাতিলও করা হয়েছে। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করলে অর্থ দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, নেটওয়ার্ক জ্যামের কারণে হয়তো কোনো কোনো আবেদন ফরোয়ার্ড করতে দেরি হতে পারে। ঢালাওভাবে সব অভিযোগ সত্য নয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বদলি আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হতো। এতে বদলি নিয়ে বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল। অনিয়ম ঠেকাতে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু হয়। এখন এই পদ্ধতিতেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসছে।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, অনলাইনে বদলি কার্যক্রম দেখভাল করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কোনো অনিয়ম-ভোগান্তির অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৭ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫ জন। সূত্রঃ আজকের পত্রিকা
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২২/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.