রাজশাহীঃ দীর্ঘ সময় চাকরি না করে এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাদ্রাসা থেকে সরকারি বেতন-ভাতা নিয়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আজগার আলী। অন্যদিকে, আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে একই উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের ৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ঈদ বোনাস-সহ তিন মাসের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেননি দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ফলে শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এর আগে গত ৫ মার্চ দুর্নীতিবাজ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘চাকরি না করেই নিয়েছেন বেতন-ভাতা, শখ অধ্যক্ষ হওয়া’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম ২০ মার্চ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে মো. আজগার আলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনার পর বুধবার (১৭ এপ্রিল) মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ‘দুর্নীতিবাজ’ শিক্ষক মো. আজগার আলীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অধিদফতর।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের অফিস আদেশে বলা হয়, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আজগার আলী চাকরিরত অবস্থায় নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন ও উচ্চ পদে নিয়োগ পান। অবৈধভাবে আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করেন। এমতাবস্থায় সরেজমিন তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অধিদফতরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাঁকি দিয়ে চাকরি করে সরকারি বেতন-ভাতা নিলেও আলীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা নিয়েছেন মো. আজগার আলী।
অন্যদিকে, মাদ্রাসায় হাজিরা না দিলেও যেহেতু সমস্যা হয় না তাই, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেন। আলীপুর মডেল কলেজে যখন গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ তখনই নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে বসেন তিনি। এতে করে আলীপুর মডেল কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। ফলে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাননি আলীপুর মডেল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসে সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র নিয়ে আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামকে দেখা করতে বলেন।
আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ’ মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়মিত সরকারের বেতন-ভাতা উঠাচ্ছেন। অথচ আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। এতে করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেতল বিলে স্বাক্ষর করেননি। গভর্নিং বডি না থাকার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন আজগার আলী।’
শিগগিরই গভর্নিং বডি গঠিত হবে বলে জানান, আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম।
জানতে চাইলে মো. আজগার আলী একবার নিজেকে আলীপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক আরেকবার আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, আপনি দয়া করে আমার প্রতিষ্ঠানে আসেন। বিস্তারিত দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশের চাকরি বিধি মেনেই চাকরি করছি। কোর্টের অর্ডার নিয়ে আমি আমার অবস্থানে আছি।’
আদালত একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার নির্দেশ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো, আপনি সরাসরি আসেন।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৪/২০২৪