দাখিল পাস না করেও মাদ্রাসার সুপার আব্দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বগুড়া জেলার গাবতলি উপজেলার এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দাখিল পরীক্ষায় ফেল করেও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ বাগিয়ে পরবর্তী সহকারি সুপার এবং সুপার পদে নিয়োগ পান। জালিয়াতি করে শিক্ষকতায়  পেশায় আসা ঐ শিক্ষক হলেন মো: আব্দুল কাদের। তিনি মহিষাবান সরকার পাড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার।

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোঃ আব্দুল কাদের সুপার পদে যে কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন সে অনুযায়ী,  ১৯৬৪ ইং সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ ইং সালে সন্ধ্যাবাড়ি দারুল হাদিস নামে একটি মাদ্রাসা হতে দাখিল পাস করেন। বাস্তবে এই নামে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অনুমোদিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। তিনি ১৯৭৭ ইং সালে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় বগুড়া জেলার গাবতলী থানার অন্তর্গত বাগবাড়ি ফাজিল মাদ্রাসা থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। আব্দুল কাদেরের দেওয়া তথ্য মতে ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করে তিনি ১৯৬৬ সালে মাত্র দুই বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হন এবং মাত্র ১২ বছর বয়সে দাখিল পাস করেন যা বাস্তবে অসম্ভব।

এছাড়াও আলিম পরীক্ষার পাশের সনদে দেখা যায, তিনি ১৯৭৮ ইং সালে গাইবান্ধা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা হতে আলিম পাস করেন। তৎকালীন সমযে ইংরেজিতে ঢাকা বানান ছিল “Dacca” কিন্তু তার আলিম পরীক্ষার সনদে ঢাকা বানান “Dhaka” লিপিবদ্ধ করা আছে। ঢাকা বানানটি এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২- ১৯৮৩ ইং সালে সংশোধন করে “Dacca” এর পরিবর্তে “Dhaka” করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে সহজেই অনুমেয় হয় যে তিনি যে আলিম পরীক্ষার সনদ দেখিয়েছেন তা জাল।

মো: আব্দুল কাদের মহিষাবান সরকার পাড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ০১-০৬-১৯৮১ ইং সালে সহকারী মৌলভী পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি সহকারী মৌলভী থেকে সহকারি সুপার এবং সুপার পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নিজের পছন্দ মত ম্যানেজিং কমিটি করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।

আব্দুল কাদের এর জালিয়াতিমূলক কর্মকান্ড ও দুর্নীতিতে কেউ যেন বাধা প্রদান করতে না পারে সেজন্য ইতিপূর্বে একটি নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটি মোঃ আব্দুল কাদের এর মনমতো না হওয়ায় সেই কমিটির বিরুদ্ধে নানা ভাবে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ ও মামলা করে কমিটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস হতে দেয়নি। পরবর্তীতে তার মনমতো অ্যাডহক কমিটি পাস করে আনেন এবং ওই অ্যাডহক কমিটির সভাপতিকে দীর্ঘদিন সভাপতি বানিয়ে প্রতিষ্ঠানে নিজের ছেলেকে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি দেয়া এবং বিভিন্ন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লাঞ্ছিত ও মানসিক নির্যাতন করেন। উল্লেখ্য যে, মো: আব্দুল কাদের উক্ত ভূয়া এবং জালিযাতিমূলক কাগজপত্র দ্বারা দীর্ঘদিন যাবত চাকুরী করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে ২৯-০২-২৪ ইং তারিখে চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করবেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার আব্দুল কাদেরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিষাবান সরকার পাড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ অভিভাবক সদস্য মো: মাসুম সরকার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, জালিয়াতি করে একটা মানুষ তার জীবন পার করে ফেললেন অথচ কেউ এটা নিয়ে কোন কথা তুললেন না। এই সুপার তার ইচ্ছে মত কমিটি করে আনেন। মাদ্রাসা বোর্ডের সিন্ডিকেট ব্যবহার করে তিনি যা ইচ্ছে করে যান। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি তার চাকরি জীবনে যে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করি।

জানতে চাইলে মহিষাবান সরকার পাড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মাহমুদুল হাসান মোহন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ের আমার কমিটির একজন সদস্য আমার কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি যতটুকু জানতে পারি তার সনদ জাল। তিনি অবসরে চলে গেছেন। এটা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একজন সভাপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আমার কাছে কোন সহযোগিতা চান আমি সহযোগিতা করব। আমার বাবাও এই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। আমার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমি এই বিষয়ে যেকোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

এ বিষয়ে গাবতলি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: তারিকুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হযরত আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৯/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

আবু সাঈদের নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুরঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের নামানুসারে ‘জামিয়া শহীদ আবু সাঈদ’ …