ঢাকাঃ লাইলাতুল কদর বা শবেকদর করুণাময় রবের পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ পুরস্কার। এই রাত স্বল্প সময়ে অসংখ্য সওয়াব অর্জন করে নেওয়ার রাত। এই মহা নিয়ামত আল্লাহ তাআলা একমাত্র উম্মতে মুহাম্মদিকেই দান করেছেন। অন্য কোনো নবীর উম্মতকে এ সুযোগ দান করেননি।
এ রাতে আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা রহমত, কল্যাণ ও বরকত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ রাতের নামেই একটি সুরা অবতীর্ণ করেছেন। এ রাতের ফজিলতের জন্য এটাই যথেষ্ট। অন্য কোনো ফজিলত না থাকলেও এতটুকুই এই রজনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।
এ রাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আল-কোরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)
ইবাদতের মাধ্যমে এই রাত জাগরণ করলে জীবনের পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
সুরা কদর নাজিলের প্রেক্ষাপট
তাফসিরের বিভিন্ন গ্রন্থে সুরা কদরের শানেনুজুল বা প্রেক্ষাপট নিয়ে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ বর্ণনা হলো, একবার নবী করিম (সা.) সাহাবিদের বনি ইসরাঈলের এক বুজুর্গের কাহিনি শোনালেন। যে বুজুর্গ একটানা ৮৪ বছর অথবা হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন। এই কাহিনি শুনে সাহাবিরা বিস্ময় বোধ করলেন এবং আফসোস করেন। তাঁরা বলেন, আগের উম্মতরা দীর্ঘদিন বেঁচে থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে নেকির পাহাড় অর্জন করত, কিন্তু আমরা তো অল্প দিন আয়ু লাভ করি।
সত্যিই আমরা হতভাগ্য। তাদের অনুশোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এই সুরা নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর দান করেছি। এই এক রাতে ইবাদত করলে পূর্বকালের দীর্ঘ ইবাদতের চেয়েও বেশি পূণ্য অর্জন করা যায়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৪৪২-৪৪৩, সুরা কদর)
শবেকদরের তারিখ
শবেকদর নির্দিষ্টকরণে অনেক মতামত রয়েছে। সবচেয়ে অগ্রগণ্য মত হচ্ছে, মহিমান্বিত এই রাতকে আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে সুপ্ত রেখেছেন। তিনি এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে এ রাতের অনুসন্ধান করতে বলেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে এ রাত রমজানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি শবেকদর অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে। (বুখারি, হাদিস ২০১৫; মুসলিম, হাদিস : ১১৬৫)
শবেকদর সম্পর্কে বেশির ভাগ আলেম বলেছেন, ২৭তম রাতেই শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যত দূর জানি রাসুল (সা.)আমাদের যে রাতকে শবেকদর হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা হলো রমজানের ২৭তম রাত।
(মুসলিম, হাদিস : ৭৬২)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭তম রাতে অনুসন্ধান করে।
(মুসনাদ আহমাদ : ২/১৫৭)
শবে কদরের আমল
রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় এ আমলগুলো করা যায়। তা হলো—১. নফল নামাজ পড়া। ২. মসজিদে ঢুকেই দুই রাকাত দুখুলিল মাসজিদ নামাজ পড়া। ৩. দুই দুই রাকাত করে মাগরিবের পর আউওয়াবিনের নামাজ পড়া। ৪. রাতে তারাবির নামাজ পড়া। ৫. শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। ৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া। ৬. তাওবার নামাজ পড়া। ৭. সালাতুল হাজাত পড়া। ৮. অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া। ৯. কোরআন তিলাওয়াত করা। ১০. দরুদ শরিফ পড়া। ১১. তাওবা-ইস্তিগফার পড়া। ১১. জিকির-আজকার করা। ১২. পরিবার-পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা। ১৪. বেশি বেশি দান-সদকা করা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.