ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে সে বছরের ১১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর আরও ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো ছাত্র সংসদের দেখা পায়নি দেশের উচ্চ শিক্ষার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এ বিদ্যাপীঠ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু নির্বাচনের পর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। ২০২০ সালে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে গত ৫ বছরে কোন নির্বাচন দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতির নির্বাচন নিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ—১৯৭৩ অনুসারে, প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডাকসু মনোনীত পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী অঙ্গ সিনেটের সদস্য হন। সিনেটে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগের বিষয় তুলে ধরেন প্রতিনিধিরা। ২২ সালের মে মাসে সিনেটের ৩৫ জন শিক্ষক–প্রতিনিধি নির্বাচন ও গত বছরের মে মাসে সারা দেশে সিনেটের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু হয়নি ডাকসু নির্বাচন।
ঢাবিতে ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এর নামকরণ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ডাকসুর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তার আগের বছর বেতন-ভাতায় সংশোধিত বাজেট ধরা হয় ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে এ কারণে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং ডাকসু ও হল সংসদের জন্য অনুদান হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয় ৪১ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় ডাকসুর জন্য ৬০ টাকা ও হল সংসদের জন্য ৬০ টাকা করে জমা দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। সে হিসেবে প্রতিবছর ডাকসু ও হল সংসদের জন্য মোট ৪২ লাখ টাকা করে জমা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ডাকসু অফিসের তথ্যমতে—গত বছর ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার তহবিল থেকে ডাকসু নেতারা সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা খরচ করেন। আগের তহবিলে বর্তমানে ১ কোটি টাকারও বেশি জমা রয়েছে।
গত ডাকসু নির্বাচনে অতিরিক্ত উন্নয়ন ফি বাতিল, গেস্টরুম নির্যাতন ও গণ রুম প্রথা বাতিল করা, খাবারের মানোন্নয়ন, খেলাধুলার আয়োজন, সাহিত্য আড্ডা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কিছু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বর্তমানে ডাকসু ও হল সংসদ না থাকায় সেগুলো আগের রূপে ফিরে এসেছে।
২০১৯ সালে ডাকসুর যে নির্বাচন হয়, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার পর ছাত্রলীগ ছাড়া সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেছিল। ডাকসুর ২৫ পদের ২৩ টিতেই জিতেছিল ছাত্রলীগ। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরেও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে ডাকসুর ভিপি পদে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আখতার হোসেন নির্বাচিত হওয়ার পরে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আখতার হোসেন বর্তমান গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে নিরপেক্ষ একটি ছাত্রসংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ১৮ হল সংসদের মধ্যে ১২ টিতে ভিপি ও ১৪ টিতে জিএস পদে জেতে ছাত্রলীগ। অন্য পদগুলোয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
কেন ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ছাত্রসংসদ হলো নেতৃত্ব তৈরি ও বিকাশের প্ল্যাটফর্ম। একজন ছাত্রনেতাকে ছাত্র সংসদের নেতা হতে হলে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে হবে, তাঁকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। বর্তমানে সেটির সুযোগ নেই।’
সারা দেশে অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি চলছে উল্লেখ করে নূর বলেন, ‘ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করা হচ্ছে, হল প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। যার ফলে মেধাবীরা রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে, সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মেধার মূল্যায়নের সুযোগ শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। ২৮ বছর পরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল, কিন্তু পরে সেটি আর হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন ডাকসু নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে নেতৃত্ব তৈরির পথ সুগম করে দেন।’
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাকসুর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষ হিসেবেও একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘নেতৃত্বের বিকাশ ও সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে ওঠে। ম্যানেজেরিয়াল দক্ষতাও আসে। সেই বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত।’
উপাচার্য এ জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক মতৈক্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ছাত্রসংগঠনগুলো ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা সচেষ্ট থাকব। সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে ও অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হলে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।’ আজকের পত্রিকা
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৩/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.