এম এম মাহবুব হাসানঃ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের নামে আমাদের শিক্ষকরা আসলে কী শেখাচ্ছেন? আমাদের গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আতাহার মাস্টারের (থার্ড স্যার) বইঠার বাড়ি, চন্দ্র দিঘলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্যাম দুলাল বাবু (এসডি স্যার) স্যারের বেদম বেতের বাড়ি ও ছেলেদের পেটের চামড়া টেনে মোচড় দেওয়া আর প্রয়াত ইমদাদ (ইবি স্যার) স্যারের একচেটিয়া বেতের বাড়ির যে সম্পর্ক এখনো হৃদয়ে যে দাগ কাটে তা মনে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেকার শ্রেষ্ঠ সম্পর্কের নাম।
তৎকালীন আমাদের ওই ভাঙাচোরা ও ছাদবিহীন স্কুলের কোনো শিক্ষার্থীই ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস বলবে না বা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন হয়েছিল সেটাও বলবে না এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে মূল্যবোধহীন কোনো আপত্তিকর আনন্দেও মত্ত হবে না। কারণ আমাদের প্রায় সবারই পিতা-মাতা আমাদের শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়ে একটি কথাই বলেছিলেন যে ‘আমার সন্তানের মাংসটুকু আপনার আর হাড্ডিগুলো আমাদের ফেরত দেবেন, তবুও ওর কোনো অনিয়ম বা অন্যায়কে সমর্থন করবেন না।’
আমাদের স্বল্প শিক্ষিত সেই মেট্রিক বা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা শিক্ষকগণ তাদের পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন। শিক্ষকগণ তাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের সামান্য অনিয়মকেও আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি বা কোনো অসত্য ও গুজব কিছুও শেখাননি। আমাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকগণও শিক্ষকদের কোনো দিন একটু কটুকথা বা হুমকি দেননি। যার ফলে শিক্ষকরা আমাদের কাছে একাধারে অতীব শ্রদ্ধেয় ও যমের মতো ছিলেন। সে জন্য আমরা শিক্ষকদের সামনে কোনো দিন বসতে শিখিনি, শিক্ষকদের সামনে দিয়ে কখনো দৌড় দিতে শিখিনি, শিক্ষকদের সামনে সাইকেল চালিয়ে যেতে শিখিনি এবং কোনো শিক্ষকেরা আদর করে তার পাশের সিটে বসাতেও পারেননি। তাতে কি আমাদের সঙ্গে শিক্ষকদের বন্ধুত্বের কোনো ঘাটতি হয়েছে? আমাদের শিক্ষকরা কি আমাদের সঙ্গে ফান করেননি? ক্লাসে আমাদের হাসাতে হাসাতে পেটে খিল ধরিয়ে দেননি? তাহলে বর্তমান কিছু কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যে নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে এর দায়ভার কে নেবে?
আমরা অভিভাবকেরা কি আমাদের সন্তানদের খুব বেশি স্বাধীনতা দেওয়ার নামে তাদের মূল্যবোধ শেখানোর ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি নাকি আমাদের কোনো কোনো শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তথাকথিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে গিয়ে নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন? লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে উপভোগ করার পাশাপাশি আমরা যেন বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ রক্ষার নৈতিক সংগ্রাম থেকে ছিটকে না যাই। এই চেষ্টাটি অব্যাহত রাখার দায়িত্বই বা আসলে কাদের?
লেখক: ব্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.