সাতক্ষীরাঃ জেলার নলতায় অবস্থিত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং সেন্টার (ম্যাটস) ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে শিক্ষক নেই একজনও। পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে যুক্ত করে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন।
দক্ষ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় ম্যাটস ও আইএইচটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৬০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পরে কোনো ধরনের জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠান দুটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিক নেওয়াজ জানান, এ দুটি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের সংখ্যা ১৩২। এর মধ্যে আইএইচটিতে ৮৩ ও ম্যাটসে ৪৯টি। এসব পদে নিয়োগ চেয়ে বহুবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। তবে এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি।
তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠান দুটিতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৪ জন এবং কালিগঞ্জ ও দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছয়-সাতজন কর্মচারীকে অতিরিক্ত দায়িত্বের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের দিয়েই দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ অফিস সহকারী, কেউ অফিস সহায়ক, কেউ ঝাড়ুদার হিসেবে আছেন।
আইএইচটির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. জিএম ফারুকুজ্জামান জানান, নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান জনবল নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু নলতার এ দুটি স্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো রকম জনবল নিয়োগ ছাড়াই কার্যক্রম ও ক্লাস শুরু করা হয়। আশপাশের ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ধার করে এনে ক্লাস করানো হয়। শুধু তাই না, ক্লাস করার বিনিময়ে এসব চিকিৎসককে কোনো ভাতা দেওয়া হয় না। ফলে অধ্যয়নরত চার শতাধিক শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, একাধিকবার জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপকসহ অন্যান্য ৮৩টি শূন্য পদের জন্য আরো একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বারবার জনবল চেয়েও না পাওয়ার কারণ হিসেবে ডা. ফারুকুজ্জামান বলেন, সারা দেশের তুলনায় প্রতিষ্ঠান দুটো সি ক্যাটাগরি হওয়ায় জনবল নিয়োগে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তার পরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই জনবল নিয়োগ পাওয়া যাবে।
ম্যাটসের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম জানান, জনবল নিয়োগ খুবই জরুরি। এখান থেকে ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ কর্মে প্রবেশ করবেন, সে লক্ষে সরকার এ স্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দিয়ে ক্লাস হওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য উদ্বেগের। তিনি জরুরিভাবে জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ম্যাটসে প্রতি বছর ৫২ ও আইএইচটিতে ১০৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান দুটির এমন পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরাও। আইএইচটির রেডিওলজি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত সজল ইসলাম, সম্রাট হোসেন, মাহফুজ হোসেন ও আসলাম হোসেন জানান, তারা আগে বুঝতে পারেননি এ প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়ে আসা শিক্ষকদের দিয়ে কোনো রকমে ক্লাস চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চতায় রয়েছেন তারা।
কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা না থাকলেও এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি থেকে দুই ব্যাচে ২৩০ শিক্ষার্থী তাদের ডিগ্রি নিয়েছেন। এর মধ্যে আইএইচটি থেকে পাস করেছেন ১৮০ জন এবং ম্যাটস থেকে দুই ব্যাচে ৫০ শিক্ষার্থী। আইএইচটির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. জিএম ফারুকুজ্জামান ও ম্যাটসের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিষ্ঠান দুটিতে দ্রুত মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন ব্যক্তিরা।
জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় ম্যাটস ও আইএইচটি হওয়াটা এ জেলাবাসীর জন্য অনেক আনন্দের। সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবেন। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হলো কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের বিষয়টি চিন্তা করে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক বলেন, জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বলা হয়েছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবো। আশা করছি শিগগিরই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, একটি মামলার কারণে দীর্ঘদিন ম্যাটস ও আইএইচটিগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি মামলাটির সুরাহা হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। কালবেলা
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.