ময়মনসিংহঃ জেলার গৌরীপুরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক ৫ হাজার ৫১ জন ছাত্রছাত্রীর ভর্তি অনিশ্চিত! উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা ছুটছেন এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে। অপেক্ষাকালীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান! ক্লাস শুরুর ২১ দিন অতিবাহিত হলেও এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার দীর্ঘতালিকা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে রয়েছে আসন ফাঁকা। মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী সংকটে পূরণ হচ্ছে না শাখাগুলো! এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদুল করিম জানান, শিক্ষার্থীদের এ সমস্যার বিষয়ে আমরা অবহিত আছি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবেদন একত্রীকরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৭৯৮ জন ছাত্র ও ৩ হাজার ৯২ জন ছাত্রী অধ্যয়ন করে। এ বছর কিন্ডারগার্টেন ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা থেকে ১ হাজার ৬২৯ জন ছাত্র ও ১ হাজার ৬৫৭ জন ছাত্রী অধ্যয়ন করে। ২০২৪ সালে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র ৪ হাজার ৪২৭ জন ও ছাত্রী ৪ হাজার ৭৪৯ জন মোট ৯ হাজার ১৭৬ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, স্কুল-মাদ্রাসার ৫৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৫টি শাখায় ৫৫ জন করে ৪ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ বছর বিদ্যালয়গুলো থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে বইয়ের চাহিদা ছিলো ৫ হাজার ৯শ জনের। যা ২০২৩ সালে ছিল ৬ হাজার ২শ জনের।
একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধা জানান, প্রতিবছর ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক বছর বইয়ের চাহিদা দেয়া হতো। যেহেতু প্রতি শাখায় ৫৫ জনের বেশি ভর্তির সুযোগ নেই। সে জন্য বইয়ের চাহিদা কম দিতে হয়েছে।
এদিকে গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামূল হক সরকার জানান, এ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করে ৩৪৯ জন ছাত্রী। লটারির মাধ্যমে ৩টি শাখায় ১৬৫ জনকে ভর্তি করেছেন। আসনের অনুমতি পেলে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় রেখেছেন আরও ১৬৫ জনকে। এ বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ২৭৩ জন। ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছিল ১৯৬ জন। তাদের মধ্যে ১৬৫ জনকে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হয়েছে। গতবছর ভর্তি হয়েছিল ২২৮ জন। এ বছরের অপেক্ষাকালীন তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি।
নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক জানান, এ বছর ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ৪৫৫ জন। ৩টি শাখায় ৫৫ জন করে ভর্তি হয়েছে। ভর্তির জন্য অপেক্ষা তালিকায় আরও ১৬৫ জনকে রাখা হয়েছে। ক্লাস শুরু হলেও তাদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসে নাই।
ধুরুয়া নাজিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব উদ্দিন জানান, একটি শাখায় ৫৫ জন ভর্তি হয়েছে আরও ১০৩ জন অপেক্ষার তালিকায়।
অপরদিকে মাদ্রাসারগুলোর মধ্যে ইসলামাবাদ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. রুকুন উদ্দিন জানান, ৫৫ জন ভর্তি হয়েছে, ভর্তিচ্ছুক তালিকা রয়েছে ৩৫ জন। শাখা খোলার জন্য তিনি আবেদন করেছেন। পাছার সামাদিয়া দাখিলা মাদ্রাসার সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ৫৫ জনের আসনের মধ্যে ২০ জন ভর্তি হয়েছে। ৩৫ জনের আসন এখনও শূন্য।
হাসনপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ৫৫ জনের মধ্যে ৪০ জন ভর্তি হয়েছে। ১০ জনের আসন শূন্য আছে। নামাপাড়া কেরামতিয়া দাখিলা মাদ্রাসার সুপার ছৈয়দ শহিদউল্লাহ জানান, ৫৫ জনের মধ্যে ৩৫ জন ভর্তি হয়েছে। ২০ জনের আসন শূন্য।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে লটারির মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষার্থীরাও শহরের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সূরযবালা, জাগরণী, শেখ লেবু স্মৃতিসহ সুনামধন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মেধাবী তালিকার ১ থেকে ২০ জনের ক্রমিকে থাকা অর্ধেক শিক্ষার্থী কোথাও ভর্তি হতে পারে নাই।
ইসলামাবাদ এলাকাবার মো. মাসুদ মিয়া জানান, তার ছেলে পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শহরের সবগুলো স্কুলে আবেদন করেও ভাগ্যের লটারিতে সুযোগ পাওয়া যায়নি।
কালিপুর দৈনিক বাজার এলাকার আরেফিন রহমান জানান, আমার সন্তান ক্লাসে ফাস্ট হয়ে লাভ কি! মেধা যাচাই লটারিতে মেনে নেয়া যায় না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.