রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে গত বছরের ডিসেম্বরে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অপেক্ষমাণ দেখিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরেই গত সপ্তাহে নিয়োগ দেওয়া হয় আরো ১৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলেছে, এভাবে পদ না থাকার পরও অপেক্ষমাণ রেখে পরবর্তীতে পদ অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ দেওয়া যায় না। এটা অনিয়ম।
তথ্য অনুযায়ী, ৭৫ জনের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ১০১ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, যা বিজ্ঞাপিত চাহিদার চেয়েও প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি ছিল। এ সময় শিক্ষক নিয়োগের পর ইউজিসির আইনে না থাকলেও ২১ জনকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। যাদের অপেক্ষমাণ রাখা হয় তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়, ‘পদপ্রাপ্তি সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া হবে’।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, একমাত্র শূন্য পদের বিপরীতেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ দেওয়া যাবে। পদ না থাকলে অপেক্ষমাণ রাখার নিয়ম নেই। এটা অনৈতিক ও অনিয়ম। এর মাধ্যমে অপেক্ষমাণ রাখার কারণে পরবর্তী সময়ে যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আবেদনের যোগ্য হয়েছে, তাদেরও বঞ্চিত করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক সেকেন্দার আলীর যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে পদ অনুমোদন আছে। তাই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ পদের বিপরীতে ২৪টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাদাত উল্লাহ এ অনিয়মই করেছিলেন। তবে এখন নিয়োগ নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। তিনি জানান, নিয়োগের বিষয়টি সিন্ডিকেটে অনুমোদন আছে। পদ আরো শূন্য আছে। আরো নিয়োগ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, অর্গানোগ্রামে পদ থাকলেই নিয়োগ দেওয়া যায় না। নিয়োগ দিতে ইউজিসির অনুমোদন লাগে। ওই অনিয়মের কথা তিনিও শুনেছেন বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক নাহিদ জেবা জানান, নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষক সমিতির পরবর্তী সভায় জানানো হবে। এছাড়া নিয়োগের অনিয়মের বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলেছেন সেহেতু এই নিয়োগ নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে তা বলার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেটে এভাবে অপেক্ষমাণ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক সদস্য। তিনি বলেন, যেসব পদ শূন্য রয়েছে শুধু সেসব পদেই নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটে সদস্যদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষক। বাইরে থেকে ২/৩ জন যারা থাকেন সাধারণত তাদের কিছুই করার থাকে না। তবে কোনো অনিয়মের বিষয় সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট দেয়নি। যদি এভাবে করে থাকেন তবে বা ভিসি নিজেই করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি ও কৃষিবিদদের নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন এই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নাম ব্যবহার করে এভাবে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান পর যত নিয়োগ হয়েছে তার অধিকাংশ নিয়োগেই অনিয়ম হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল আহসান চৌধুরী বলেন, নিয়ম মেনে নিয়োগ দিতে হবে। অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.