এইমাত্র পাওয়া

চার বছরে ২ হাজার শিশু হত্যা, ধর্ষণের শিকার ২৫০০

ঢাকাঃ সর্বশেষ চার বছরে শিশু নির্যাতন ও শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যনুসন্ধানে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শিশু অধিকার পরিস্থিতি ও করণীয়’ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে সহযোগিতা করে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেট ফোরাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন, প্ল্যান বাংলাদেশসহ আরও ১০টি সংস্থা।

গণমাধ্যম ও নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে আসক বলছে, ২০২০ থেকে চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ২০৯ শিশুকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে করোনাকালে ১ হাজার ৭১৮, ২০২১ সালে ১ হাজার ৪২৬, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৮ এবং ২০২৩ সালের ১১ মাসে ৯৭১ শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

প্রায় চার বছরে ২ হাজার ১৫০ শিশু হত্যার তথ্য দিয়েছে আসক। এর মধ্যে ২০২০ সালে ৫৮৯, ২০২১ সালে ৫৯৬, ২০২২ সালে ৫১৬ এবং গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৪৯ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ সময়ে শুধু শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৪৭২ শিশুকে।

সংস্থাটি বলছে, গত চার বছরে ২ হাজার ৬৪৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের হিসাবে ২০২০ সালে করোনাকালে ১ হাজার ১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালে ৭৭৪, ২০২২ সালে ৫৬১ ও গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৯২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১০৯ শিশুকে। এ ছাড়া প্রায় চার বছরে ৬৯ ছেলে শিশু বলাৎকারের (ধর্ষণ) শিকার হয়েছে।

আসকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অন্যভাবে শিক্ষক কর্র্তৃক শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা অতীতের কয়েক বছর ছাড়িয়ে গেছে চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে। গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩৯ শিশু শিক্ষকের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যদিও ২০২০ সালে ১২৫, ২০২১ সালে ৬৭ ও ২০২২ সালে ১০৯ শিশু শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের তথ্য দিয়েছে আসক।

আসকের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার এই সংখ্যাগুলো শেষ সংখ্যা নয়। অনেক ঘটনায় প্রকাশ্যে বা গণমাধ্যমে আসে না। তিনি বলেন, গরিব ও পথশিশুদের বেলায় সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও অপরাধ কমছে না।

বাল্যবিয়ের কারণ ও তা নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ নিয়ে তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা, দারিদ্র, মেয়ে শিশুদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতায় গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিয়ে চলছে।

অনুষ্ঠানে সেভ দ্যা চিলড্রেনের পরিচালক (চাইল্ড প্রটেকশন অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস গভর্নেন্স) আব্দুল্লাহ আল মামুন বাল্যবিয়ে, শিশু শ্রম ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগ্রহণ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বা নির্বাচনের মতো কর্মসূচি বা যেকোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমে শিশুদের সম্পৃক্ত করা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শিশুদের উন্নয়নে বাজেট ও তা বাড়ানো নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়। শিশুদের বাজেট আলাদা হয় না। এটি যেমন আলাদা করা উচিত, তেমনি এটিকে আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো উচিত। অনুষ্ঠানে আসকের সমন্বয়ক তামান্না হক রিতি বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/১১/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.