ঢাকাঃ কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার খাতা তৈরির কাজ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি শর্ত ভেঙে কাজটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে (সাবকন্ট্রাক্ট) দিয়েছে, যাদের এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নেই।
গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের ১১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এমন অভিযোগ জমা পড়েছে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে টেন্ডারের (দরপত্র) মাধ্যমে কাজ পাওয়া এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসের বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেন আব্দুর রহমান নামের একজন প্রেস মালিক।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদার মূল প্রতিষ্ঠানের বদলে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ এসব খাতা তৈরি করছে। এতে খাতা তৈরিতে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার, সঠিক সময়ে খাতা সরবরাহ না করা ও নিরাপত্তার অভাবে অসাধু ব্যক্তিদের কাছে উত্তরপত্র চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকার আফতাব আর্ট প্রেস নামের প্রতিষ্ঠানে এসএসসি ও এইচএসসির এসব খাতা তৈরির একটি ভিডিও ক্লিপ কালের কণ্ঠ’র কাছে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, কারখানার কর্মীরা বলাবলি করছেন, সাবকন্ট্রাক্টে কাজটি নেওয়া হয়েছে। চার-পাঁচ দিন ধরে এসব খাতা ছাপার কাজ চলছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সূত্রাপুর থানার কাছাকাছি খোলাবাজারের পাশে আফতাব আর্ট প্রেসের অবস্থান। মাত্র দুটি ছাপার মেশিন নিয়েই স্বল্প পরিসরে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরনো এই জীর্ণ ছাপাখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই।স্বল্প পরিসরের এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি মূলত সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
অভিযোগকারী আব্দুর রহমানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রেস মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, কাজ পাওয়ার জন্য কয়েকটি মূল শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্ত পূরণ না হলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেও কাজ দেওয়া হয় না। শর্তে বলা আছে, নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থায় ও নিজস্ব কারখানায় এসব খাতা ছাপার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অথচ কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি সূত্রাপুরের আফতাব আর্ট প্রেসকে সাব-কন্ট্রাক্টে খাতা তৈরির কাজটি দিয়েছে।
এতে নিম্নমানের খাতা, সঠিক সময়ে সরবরাহে অনিশ্চয়তা ও অসাধু ব্যক্তির হাতে খাতা চলে যাওয়ার শঙ্কা আছে।
প্রেস মালিকরা বলছেন, বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে আফতাব আর্ট প্রেসের স্বত্বাধিকারী মো. মাহমুদ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি একটি সভায় আছেন বলে জানান। এরপর তাঁকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘উত্তরপত্র ছাপার কাজ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়ার বিষয়ে জানতে পেরেছি।’ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ওই কারখানায় দুটি মেশিনের একটি আমার। করোনার সময় মেশিনটি আমি কিনেছি। তবে তা কারখানা থেকে সরানো হয়নি।’
আব্দুল মান্নান দাবি করেন, ওই কারখানায় তাঁরও অংশ আছে। প্রেসটিতে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
উত্তরপত্র ছাপার কাজ সাব-কন্ট্রাক্টে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল নাসের। তিনি বলেন, ‘নিজে কাজ করবে, এমন শর্তেই এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসকে কাজ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ভিন্ন প্রেসে খাতার কাজ চলছে, এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে কিছু ভিডিও ক্লিপও সংগ্রহ করেছি। সচিব স্যারকে (শিক্ষাসচিব) এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিককে ডেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইব। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরীক্ষার উত্তরপত্রের ওএমআর শিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ খাতা যাতে বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। খাতার নিরাপত্তা ব্যাহত হয়েছে কি না, বিষয়টি জানতে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এসব খাতার কাজ সাব-কন্ট্রাক্টে দেওয়ার অভিযোগ এর আগে কখনো শুনিনি। পরিদর্শনে কাজ করার সক্ষমতা না পেলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেও আমরা কাজ দিই না। সঠিক মান রেখে নির্ধারিত সময়ে খাতা সরবরাহকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এসব খাতা যেন বাইরে চলে না যায়, বিষয়টি ঠিকাদারদের নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে নিয়মমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কালের কণ্ঠ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.