নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির দায়ে উত্তর যাত্রাবাড়ী সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
রবিবার বিকাল চারটায় বিদ্যালয়টির সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন কয়েকশ মানুষ। তারা এই প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে রবিবার দুপুর ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জাতীয় করণের দাবিতে বিগত ২২ দিনের সফল আন্দোলনের ফলে কাওছার আহমেদ শেখকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বরখাস্ত করা হয়ে উল্লেখ করে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। একই সাথে আগামী ২১ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও সারাদেশে জেলা সদরে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে গত ১৩ নভেম্বর ‘কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত বিটিএ সেক্রেটারি কাওছার‘ শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আলাদা আলাদা ব্যানারে অনুষ্ঠিত হওয়া মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ প্রদান, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখাসহ একাধিক অভিযোগে রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি। তারা আরো বলেন, নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করা প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।
বক্তারা আরো বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আয়ের খাতের ১ কোটি ৪২ লাখ ৭ হাজার ৪৮৯ টাকা এবং ব্যয়ের খাতের দুর্নীতি ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা এবং ২০২০ সনের শিক্ষকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের আত্মসাৎকৃত ১ লাখ ৯৮ হাজার অনতি বিলম্বে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা করার প্রদান করার দাবি জানান। অন্যথায় বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা বেগম বলেন, আমাকে এমপিওভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেন এবং এমপিওভুক্ত করতেও ব্যর্থ হন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া ২০২০ সালের ওই বছরেই করোনাকালীন সময়ে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা নগদ বিতরণের নামে ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলন করলেও শিক্ষকদের হিসাবে জমা বা ক্যাশ প্রদান করেননি। আমরা তার বিচার দাবি করছি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন
প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকাস্থ যাত্রাবাড়ী থানাধীন সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে গত ১৩/১১/২০১৩ ইং তারিখে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা মনেকরি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে সাময়িক বরখান্ত করার পিছনে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় করণের দাবিতে বিগত ২২ দিনের সফল আন্দোলনের যারা বিরোধীতা করেছিল তাদের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ শিক্ষা বোর্ডের ১৫/১০/২০১৩ ইং তারিখের পত্র ৫ এর (চ) মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ বিজ্ঞান বিভাগে ২১৪০/- এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২০২০/- বোর্ড নির্ধারিত ফি জমাদানের জন্য নোটিশ প্রদান করা স্বত্ত্বেও সভাপতি মহোদয় ভিন্ন নোটিশ প্রদান করে তাঁর মনঃপুত লোক অফিসে বসিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৮১৪০/- ও ৮০২০/- ফি গ্রহণ করেছেন। যার কোন প্রকার রশিদ প্রদান করা হয়নি এবং আদায়কৃত সমূদয় অর্থ তিনি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে প্রায় ১৭,০০,০০০/- (সতেরো লক্ষ) টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি বিদ্যালয় অর্থায়নে অত্র প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু শিক্ষক- কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়। যেখানে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুস্মরণ করা হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সভাপতি মহোদয় স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকভাবে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগদানের জন্য নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিবর্তন করে নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র প্রদানের বিধান থাকলেও সভাপতি মহোদয় নিজেই স্বাক্ষর করে নিয়োগপত্র প্রদান করেছেন।
অত্র প্রতিষ্ঠানে বিধিমোতাবেক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন, প্রতি অর্থ বছরের সিএ ফার্ম কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৫ এবং ২০২১ সনের ২টি নিরীক্ষা প্রতিবেদন থাকা স্বত্ত্বেও সভাপতি মহোদয় ম্যানেজিং কমিটির কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে নিজের ইচ্ছেমত একটি মনগড়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে এবং অফিস সহকারি মোঃ এনামুল হক খান কে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দানের প্রয়োজনে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মূল কপি চাওয়া স্বত্ত্বেও অদ্যবধি উক্ত প্রতিবেদনের মূল কপি না দিয়ে বার বার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে যাচ্ছেন এবং প্রায় একমাস যাবৎ অফিস সহকারি মোঃ এনামুল হক খান কে তাঁর দাপ্তরিক কাজ করার জন্য অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এমনকি তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকী প্রদান করে অফিসের সকল আলমারি ও ফাইল কেবিনেটের চাবি জোরপূর্বক নিয়ে অফিস কক্ষের তালা পরিবর্তন করে নতুন তালা লাগিয়েছেন ।
প্রতিষ্ঠানের পানি ও বিদ্যুৎ লাইন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের সামনে সভাপতি নিজস্ব ক্রয়কৃত বাড়িতে সংযোগ প্রদান করেছেন । যার বিল প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অবৈধভাবে নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।
অনাগত ভবিষ্যতের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব বেতন থেকে চাঁদা প্রদান করে শিক্ষক কল্যাণ পরিষদ নামে একটি ব্যাংক হিসাব খুলে উক্ত চাঁদা জমা রাখছেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহোদয় নিজের আস্থাভাজন লোক নিয়োগ করে উক্ত কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ বানিয়ে পরিষদের তহবিল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে কোষাধ্যক্ষ জনাব মাসুদ রানা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফরম বিক্রি নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও সভাপতি মহোদয়ের নির্দেশে কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই বিগত দুই বছর ভর্তি ফরম বিক্রি করে ফরম প্রতি ২০০/- (দুইশত) টাকা আদায় করে সমূদয় অর্থ সভাপতি মহোদয় আত্মসাৎ করছেন।
বিদ্যালয়ের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়ন কাজে সভাপতি মহোদয় নিজের আশির্বাদপুষ্ট লোক দিয়ে উপ-কমিটি গঠন করেন এবং কাজ শেষে বার বার তাগিদ দেয়া স্বত্ত্বেও বিল-ভাইচার দাখিল না করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অধ্যক্ষ মহোদয়কে অসহযোগিতা করছেন। যার ফলে নিয়মিত ও সঠিকভাবে হিসাব-নিকাশ হালনাগাদ করা যাচ্ছে না।
উপরোক্ত বর্ণনা মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম অনু ধারাবাহিক অনৈতিক কাজে বাধা প্রদান করায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)র সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাময়িক বরখান্ত করার ফলে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীগণ আজ উদ্বিগ্ন।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আবুল কালাম অনু বলেন, আমরা নিবন্ধিত ফার্ম দিয়ে ১০ বছরের অডিট করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। অডিটে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য মেলে। তাকে দু’দফা শোকজ করা হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে সময়মত আসেন না, অনেক সময়ই বিদ্যালয়ে এসে স্বাক্ষর করে বের হয়ে যান। তিনি কম্পিউটার অপারেটর থেকে সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) পদে তার নিজ জেলার বাসিন্দা হোসেন শেখকে জাল সনদের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করেন। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি ইস্যু করেছে শিক্ষা প্রশাসন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.