ঢাকাঃ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ঈমান বাশার তাঁর ছেলেমেয়েদের নেড়েচেড়ে দেখেন যে তারা বেঁচে আছে কি না। ফিলিস্তিনের উত্তর গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। তবে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি দক্ষিণ গাজার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে ঈমান বাশার জানান, তাঁর স্বামী বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছেন। তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি একা থাকতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আর বাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে করেননি। তাই সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছেন জাতিসংঘ পরিচালিত এই স্কুলে। কারণ স্কুলটি এখন শরণার্থী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিদিন সকালে নাশতার রুটির জন্য ঈমানকে অন্তত এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়। তারপর তিনি শৌচাগার ব্যবহারের জন্য পার্শ্ববর্তী খান ইউনিস এলাকায় মামার বাড়িতে যান। কারণ শরণার্থী ক্যাম্পে শৌচাগার ব্যবহারের জন্যও দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
গার্ডিয়ানের সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, মামার বাড়ি রেখে শরণার্থী শিবিরে থাকেন কেন? জবাবে ঈমান বলেন, মামার বাড়িতে ইতিমধ্যে অর্ধ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আমিও যদি যোগ দেই, তাহলে মামার ওপর চাপ বাড়বে। এমন স্বার্থপর আচরণ তো করতে পারি না।
ঈমান বাশার আরও বলেন, ‘আমি নিজেকে শক্ত রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছি। তারপরও এরকম যুদ্ধ পরিস্থিতিতে একজন মায়ের দুর্দশার অন্ত থাকে না। যা কিছুই ঘটুক না কেন, এই শিশুদের ভুলিয়ে রাখতে হয়, খাবার খাওয়াতে হয়। এই যুদ্ধ আমার অনেক প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই এখন আমার কান্না করার সময় নেই। বাচ্চাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
ঈমান বাশারের মতো গাজায় এখন উদ্বাস্তু অবস্থায় রয়েছেন অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। ঈমান এর আগে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ছিলেন। সেখানে গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে ১৯৫জন ফিলিস্তিনেকে মেরে ফেলে। এরপর প্রাণভয়ে ঈমান তাঁর সন্তানদের নিয়ে এই স্কুলে আশ্রয় নেন। কিন্তু এখানেও তীব্র খাদ্য সংকট, পানির সংকট ও ওষুধের সংকট রয়েছে। কোনো কিছু কিনতে হলে দুই ঘণ্টা দূরের বাজারে যেতে হয়। বিদ্যুৎ নেই। গ্যাসের অভাব রান্নাও করতে পারেন না। এক অবর্ণনীয় কষ্টকর জীবনযাপন করছেন গাজাবাসী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৮ দিনের যুদ্ধে ৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ অভিযোগ করে বলেছে, গাজার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও নিরাপদ নয়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে নির্বিচারে বোমা হামলা হচ্ছে।
উত্তর গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন ঈমান। স্কুলটিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়ে আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঈমান অশ্রুসিক্ত গলায় বলেন, ‘প্রতিদিন আমার ছাত্র–ছাত্রীদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। আশা করি, তারা নিরাপদে আছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.