লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আহাম্মদ। ছবিঃ সংগৃহীত

সহকর্মী ৩শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি: প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া শিক্ষা কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালীঃ জেলার সুবর্ণচর উপজেলার হাজী লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী, মানসিক নির্যাতনসহ তিন শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম। গত ২ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরারর লিখিত অভিযোগ এবং গত ৭ অক্টোবর ‘প্রধান শিক্ষক ফিরোজের বিরুদ্ধে সহকর্মী তিন শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ!’ শিরোনামে শিক্ষাবার্তা”য় সংবাদ প্রকাশের জেরে তদন্ত করে জেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। অভিযোগকারী ঐ তিন শিক্ষিকা হচ্ছেন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিংকু রানী পাল, ফাতেমা তুজ জহুরা ও অজিবা খাতুন।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর জেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম সরেজমিনে তদন্তে আসেন। তদন্তে এসে অভিযোগকারী ঐ তিন শিক্ষিকাসহ মোট পাঁচ শিক্ষকের বক্তব্য শোনেন এবং লিখিত বক্তব্য নেন। পাঁচ শিক্ষকই প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেন। সব শুনেও প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম অভিযোগকারী ঐ তিন শিক্ষিকাকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি সেই চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন।

যৌন হেনস্তার শিকার শিক্ষিকারা জানান, বিভিন্ন সময়ে প্রেম নিবেনদন, যৌন সম্পর্ক স্থাপন, গর্ভধারণ করেছি কেন, বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে বলা, হিজাব পড়লে শরীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না বলাসহ নানা বিষয়ে হেনস্তা করতে থাকেন। কোনো উপায় না পেয়ে তারা অভিযোগ দিতে বাধ্য হোন। তদন্তে এসে তাঁদের কথা শোনেন ভারপ্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা এবং লিখিত জবানবন্দি নেন। এরপর বিভিন্নভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী লাল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আহাম্মদ গত রবিবার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইনা বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সুবর্ণচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো:আবু জাহের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আজ তদন্ত শেষ করলাম, আগামী ২ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিব। ওই তিন শিক্ষিকা বাদেও আরো শিক্ষকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যৌন নিপীড়নের মত গুরুতর অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শিক্ষাবার্তা’র প্রতিনিধিকে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমি চাপ প্রয়োগ করেছি আপনি জানলেন কোত্থেকে। আপনি চাপ প্রয়োগ করেছেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ড. শফিকুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে গত রবিবার বলেছিলেন, কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে । তিনি দুই দিনের মধ্যেই নোয়াখালীতে যোগদান করবেন। আমি বিষয়টি তাকে বলে দিচ্ছি তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মনসুর আলী চৌধুরী। তিনি শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আজ যোগদান করেছি অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে আমি জানি।বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.