বরিশালঃ জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দেউলী মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মো. আলী আকবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ১০ বছরের আয়-ব্যয়ের প্রায় ৭৩ লাখ টাকার হিসাব না দেয়া, শিক্ষকদের পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহণ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হরিদাস পাটিকর বলেন, ২০২২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটি উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেন। কিন্তু অদ্যাবধি অধ্যক্ষ কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেয়নি। পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক মো. ফারুক হোসেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বিধি মোতাবেক আমি অত্র মাদ্রাসায় জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু অধ্যক্ষ আমার কাছে পদোন্নতি বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। না দিলে আমাকে পদোন্নতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। তাই আমি বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি ।
গত ১৩ই মে ২০২৩ গভর্নিং বডির সভায় আমাকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেজুলেশন সম্পন্ন করেন। কিন্তু অধ্যক্ষের ভাগিনা প্রভাষক মুহাম্মদ এনায়েতুর রহমানের চাকরির বয়স ৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদোন্নতি নিয়ে গড়িমসি শুরু করেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে আচরণ বিধি লঙ্ঘন দেখিয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে ৫ই সেপ্টম্বর ২০২৩ তারিখ শোকজ নোটিশ প্রদান করেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, এনায়েতুর রহমানের এমপিও হয় ২০১৫ সালে। ফারুক হোসেনের এমপিওভুক্তি হয় ২০১৪ সালে। অথচ অধ্যক্ষ এমপিওভুক্তির নীতিমালা ২০১৮/২০ পর্যন্ত সংশোধিত ১৩ নং অনুচ্ছেদ অবমাননা করে মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমানকে উক্ত পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য ফারুক হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে শিক্ষকদের স্কেল পরিবর্তন, নতুন এমপিওভুক্তিকরণ, বিগত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদানসহ আয়ের প্রায় ৭৩ লাখ টাকার হিসাব বিবরণীতে গরমিল রয়েছে। সে সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তাকেও শোকজ নোটিশ করেছেন এবং চাকরিচ্যুত করার জন্য বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করছেন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ ।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আলী আকবর বলেন, অভিযোগকারী ফারুক হোসেনের পদোন্নতির জন্য আমি লিখিত সুপারিশ করেছি। তবে মাদ্রাসার স্বীকৃতি নবায়ন না থাকায় পদোন্নতি হয়নি। স্বীকৃতি নবায়নের জন্য মাদ্রাসার জমির কাগজপত্র রেকর্ড করতে হয়। এজন্য তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে আবার ফেরত দেয়া হয়েছে।
মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গারুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জুলফিকার হায়দার বলেন, ফারুক হোসেনের পদোন্নতির জন্য মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রয়োজন। আর স্বীকৃতির জন্য মাদ্রাসার নামের ৬টি দলিল রেকর্ড করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এ জন্যই উনি টাকা দিয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে আবার ফেরত দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার জানান, আমি অভিযোগের বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করছি। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেছি, এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.