এইমাত্র পাওয়া

নিজস্ব টাকায় কম্পিউটার কেনায় বৈষম্য দেখছেন শিক্ষক নেতারা

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার থাকা আবশ্যক’—বলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এজন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম দুটি কম্পিউটার কেনার নির্দেশ দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। তবে শিক্ষক নেতাদের মতে, দেশের ১৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হলেও অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব অর্থায়নে কম্পিউটার স্থাপন এক ধরনের বৈষম্য।

জানা যায়, গত ২২ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধানদের পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, নতুন কারিকুলামের আওতায় ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহার উপযোগী কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস থাকা আবশ্যক। মাউশির আওতাধীন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন কম্পিউটার বা ডিভাইস নেই, তাদের আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইন্টারনেট সংযোগসহ দুটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার স্থাপন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টিকে অতীব জরুরি বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আরও জানা যায়, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১৫-২০১৯ মেয়াদে সারা দেশে মোট ৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২০-২০২৩ মেয়াদে আরও ৫ হাজার ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিটিতে ১৭টি ল্যাপটপ, একটি এলইডি স্মার্ট টিভি, ওয়েব ক্যামেরা, প্রিন্টার, ল্যান কানেকশন সেটিং মাল্টিপ্লাগ, রাউটার, স্ক্যানারসহ মোট ২৩ ধরনের আইসিটি সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসবাব সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

কিন্তু সরকারিভাবে ল্যাব পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ স্থাপনের জন্য মাউশির নির্দেশের পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, সারা দেশে মাউশির অধীন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল অ্যান্ড কলেজই আছে ২৫ হাজারের মতো। এর সঙ্গে মাদ্রাসা ও কারিগরি যোগ করলে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজারে। কিন্তু সরকারিভাবে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে। বাকিগুলোতে সরকারিভাবে বৃহৎ পরিসরে ল্যাব স্থাপন করা না হলেও ইন্টারনেট সংযোগসহ অন্তত দুটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ সরবরাহ করা যেত। সেটি না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটিকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন তারা। এর বাস্তবায়ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন অধিকাংশ শিক্ষক নেতা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু সাংঘর্ষিক নয়, বৈষম্যপূর্ণও। করোনাকালীন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুগণ হয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার স্থাপনের সামর্থ্য নেই। আবার একটি প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে ল্যাব করা হলো, পাশের অন্য প্রতিষ্ঠানে কেন করা হলো না? এটি না করেই কেন এমন নির্দেশনা দেওয়া হলো? এটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা করা উচিত ছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে প্রধান সমস্যা আর্থিক। গত বছরের চেয়ে এবার টাকা কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুধু নির্দেশ দিলেই তো হবে না, সক্ষমতাও দেখতে হবে। প্রতিষ্ঠান নিজে চলতে না পারলে কম্পিউটার কিনবে কী দিয়ে? তিনি বলেন, যখন ল্যাব করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন হয়তো সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল। এখন হয়তো নেই। অল্প প্রতিষ্ঠানে ল্যাব স্থাপন না করে সব প্রতিষ্ঠানে একটি বা দুটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ দিলে ভালো হতো।

যদিও কম্পিউটার কেনার মতো টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডে আছে বলে বিশ্বাস করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নয়। এখন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও সরকার দেয়। তারা ছাত্রদের কাছ থেকে যে বেতন নেন, তা দিয়ে কী করেন, এখনো সঠিকভাবে জানি না। কাজেই দুটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কেনার মতো সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

অধ্যাপক নেহাল বলেন, আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার আছে বলেই জানি। তার পরও যদি কোনোটাতে ঘাটতি থাকে, তাদের কেনার মতো ফান্ডও আছে।

শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আস্তে আস্তে সবাই এটি পাবে। মূল্যায়ন থেকে শুরু করে সবকিছুই অ্যাপ বা সফটওয়্যারনির্ভর। সেসব কাজ তো করতে হবে। সেজন্য সবাইকে কম্পিউটার কেনার কথা বলেছি। নির্দেশনা দিয়ে বলেছি, রুট লেভেলে যাদের কম্পিউটার নেই, তারা যাতে ফান্ডের টাকা দিয়ে কিনে নেয়।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৯/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.