রংপুরঃ জেলার মিঠাপুকুরে গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে মামলা থাকার পরও ৬টি পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ বাণিজ্য করতে কোটি টাকা লেনদেন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধে কয়েকজন অভিভাবক উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। কিন্তু এর কোনো জবাব দেননি কর্মকর্তারা। উল্টো নিয়োগপ্রক্রিয়ার জন্য ডিজির প্রতিনিধি দেয়ারও পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুরের গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ পদে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনের সময় শেষ হওয়ার পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতে পারেন স্থানীয় ও অভিভাবকরা। মূলত মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করতে এমন কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ওই বিদ্যালয়ে ৬টি পদের মধ্যে শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আয়া ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
স্থানীয় অনেকে ওই নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ফলে কর্তৃপক্ষের পছন্দসই প্রার্থীরাই শুধু আবেদন করতে পেরেছেন। এর ফলে অনেক যোগ্য ব্যক্তি বঞ্চিত হয়েছেন। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন কয়েকজন অভিভাবক।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সঠিক পন্থায় গঠিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও নিয়োগ প্রদানের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এবং মিলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়টির সভাপতি আতিয়ার রহমান। বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তারপরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ৬ পদে নিয়োগের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। আরেক অভিভাবক আবুল খায়ের বলেন, আমরা গোপন নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছি। তারপরও নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান রেখেছেন তারা। মূলত মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানে কোনো বাধা মানছেন না ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও মিলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রায় ৯ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি প্রধান শিক্ষক পদে বহাল থেকে নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির গঠিন করেছেন। সেই কমিটির বিরুদ্ধেও আদালতে মামলা রয়েছে। সেটিও তিনি মানছেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ম্যানেজিং কমিটি সব ক্ষমতার উৎস। ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে, তারপরও কীভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটিকে অনুমোদন দেয় শিক্ষা বোর্ড। আমার করার কিছু নেই। রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। সঠিক পন্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া না হলে, নিয়োগ প্রদান বন্ধ থাকবে।
গোপালপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন শহিদুল ইসলাম। নিয়োগে তিনি প্রধান শিক্ষক প্রার্থী। তাই রেজ্যুলেশনে আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়েছে। সব কার্যক্রম মূলত তিনিই করেন। গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
মিলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়টির সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন, গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়নি। আবেদনকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.